মহামারি ও সেলাইকল
বেদনার মত রাত দিন
দুনিয়ার উৎকণ্ঠা নিয়েই জেগে থাকে!
কোথায় লেগে গেল আগুন,
কোথায় মানুষ কেবল দৌঁড়াচ্ছে,
পা থেকে খুলে যাচ্ছে স্যান্ডেল
সড়কে স্রোতের ঢেউ,
মালিকের মর্জি;
রুটিরুজির আয়ু বাঁচাতে হবে
বাইরে ভাইরাসের ভয়
কিন্তু বেপরোয়া তুমি,
তোমাদের মৃত্যুভয় সেলাইমেশিনের সুঁতোয়
সস্তায় আটকে আছে বহুদিন!
এ আগুন মৃত্যুক্ষুধা
জানি না আগুন নেভাবে কী জল দিয়ে!
পেটের ভেতরে ক্ষুধার তীব্র ব্যথা
মানুষ ধুকছে অভাবের দিনকালে
লকডাউন আজ তাদের জন্য বৃথা
দাও দাও ভাত প্রতিটি ঘরের দোরে
মানুষের হক আজ তুমি ভাত দাও
নেভাও আগুন নেভাও বিপন্নতা
মানুষ থাকুক অন্দরে অগোচরে
ঘরের সংজ্ঞা যাদের চিলতে কোঠা
সেখানেই তার সন্তান সন্ততি
আগুনের আঁচে কামনার রাত এলে
এক ঘরে তার যাবতীয় প্রস্তুতি
আজ সেই ঘরে অভুক্ত কোন জন
কাজ নেই তবু খালি হাতে ঘরে ফেরা
দুর্ভাবনার শূন্য প্যাডেল পায়ে
আকাশের কাছে ফরিয়াদ তার গোণা
কোথায় রহম কোথায় জীবন তার
আল্লাহ্ ছাড়া কেবা তার সহচর
এমন মানুষ নিরন্ন পথে আজ
পেটের ক্ষুধায় মাস্কের প্রয়োজন!
আগে দাও ভাত-দেবার নিশ্চয়তা
মানুষের পেট-রুটিরুজি আজ মৃত
করোনা রোগের মৃত সংখ্যাটা জানো
ক্ষুধা-মৃত্যুর পরিসংখ্যান পাবে জেনো
তবুও নগর জলাধার বনোভূমি
শান্ত এখন বাতাস বইছে খুব
ফুলের সঙ্গে বেড়েছে সাগরলতা
স্বস্তির শ্বাসে জলের খেয়ালী ঢেউ
আমরা তাদের মাফ করে দিই চলো
পেটের ক্ষুধায় ভুলে যায় যারা রোগ
জীবাণু তাদের জীবনের থরে থরে
মৃত্যুর সাথে ঘুমায় তাদের পাড়া
এ আমার দেশ এরা এ দেশের লোক
তাদের আর্তি তোমার জানালা জুড়ে
করোনা কালের শত্রু তাদের পেট
পেটের কান্না ভাতের বলকে উড়ে
তুমি আমি আজ তাদের কান্না শুনি
আমাদের ঘরে আমদানী বারোমাস
রাষ্ট্রের কাছে তাদের একটা ধ্বনি
আগে দাও ভাত বাঁচার অঙ্গীকার
তারপর দেখো তারা ফিরে যাবে ঘরে
মাচায় ফলাবে হলুদ লাউয়ের ফুল
আমরা যেমন বসে আছি ঘর পুরে
তারাও মানবে ঘরের হুলুস্থুল
পৃথিবীর আদিগন্ত গান
আমারই জরায়ুফুল ফুটেছিলো কাঁচা নাভিমূলে
ফুলের পরাগরেণু পাপড়ির সবটুকু কায়া
মায়ায় বাড়িয়েছিলো আয়ু শুধু পৃথিবী দেখার
কত পল ডুবেছিলো ভেসেছিলো কত পল অঙ্কুরিত স্নেহে
তারপর একদিন আলো-জলে চোখ মেলা পাখি
গেয়েছিলো পৃথিবীর আদিগন্ত শব্দের কুহরে
ছোটো ছোটো পদচ্ছাপে প্রজাপতি-ঘাস-পথ শেষ হলে পরে
মর্মরিত শুষ্ক বনে সভ্যতার নদী হলো সে যে!