বাঁশিওয়ালা আসবেন না
বসত বাড়িতে উঁইয়ের ঢিবি
খাটের নিচে, তোষকের চিপায় রক্ত চোষা
ইচিং বিচিং খেলায় মেতেছে গুটি কয়েক ইঁদুর ছানা
উঁই ঢিবির সৌন্দর্য খাই, থাক না, কি এমন ক্ষতি
রক্ত চোষাদের লুকোচুরি খেলায় প্রহরী হয়েছি
পোষা বিড়ালটার আহার যোগাতে ইঁদুর ছানাইতো ভরসা।
আমাদের গা পুড়ে যাচ্ছে
আমাদের নদী শুকিয়ে গেছে
আমাদের জ্বিভে পেরেক মারা
আকাশপানে বিচার দিয়ে আমরা আজ দিশেহারা।
নিমন্ত্রণপত্রে হিসু করে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা
উঁইয়ের ঢিবি ভাঙা হচ্ছে না
রক্ত চোষাদের রাজত্ব
ইঁদুরপালের খিলখিল হাসি।
কানকথার অমৃত খেয়ে বেমালুম সঙ সেজে বসে আছি।
তুমি আমার ভেতরে ঢুকে পড়ছো
আমি তোমার ভেতরে
গোপন কিছু নেই, আইনের হাতে হাতকড়া
নিউরনের জাল, তটস্থ
সম্মোহিত জনাজয়েক, উঠতিরা লাল জলে বুদ
খবরের কাগজ তুমি সাদা কেন হে?
অসীম সম্ভাবনার না মানা মৃত্যু
বুম হাতে সহস্র জনতার মাঝে তুমি যখন ঠোঁট নাড়ো
আর চোখ রাখো স্থির
পর্দার ওপারে তোমার মা তখন বাবাকে ডাকতে থাকে প্রাণপণে
বলতে থাকে, দেখে যাও, দেখে যাও শেষই হয়্যা গেইলো
সুযোগ পেলে ঘুড়ি উড়ানো আর লাটিম বন্ধুরা স্মৃতিতে হাতড়ায়,
পানের পিক ফেলে পাড়াতো গায়েন, সুর করে বলতে থাকে দর্শন তোমার।
সেই তুমি সবুজ ঘাসের মাথায় জমে থাকা শিশির মাড়িয়ে
আর হাঁটবে না
ধর ধর, ফিসফাস শব্দের পিছনে
কবিতার স্তবকে, চা-খানার উত্তাপে তুমি থাকবে না
অসীম সম্ভাবনা-
আমাদের জন্য এ এক অবিশ্বাস্য সংলাপ।
চেয়ে দেখো ভ্যাকসিন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
এবার অন্তত চোখ খোলো,
প্রথম কাতারের হাস্যোজ্জ্বল্য যোদ্ধা, আমাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে দাও
আজব্দি হার না মানা এক ঐতিহ্যিক জাতি আমরা
সাহস-শক্তির জন্মদান আমাদের অস্থি-মজ্জায়
হেরে যাওনি তুমি –
তুমি হেরে গেলে সাদা এফ্রোনের রং বদলে যাবে
প্রতিটি ক্যামেরার ক্লিক ঝাপসা হবে,
স্যালুটগুলো হবে মলিন
অন্তত একটি স্যালুট, একটি এফ্রোন আর একটি ক্লিকের
জন্য বেঁচে থাকবে তুমি
যারা অকুতোভয়ের রক্ত বহন করে যায় কাল থেকে কালে।
স্বপ্নাঘাত এবং দায়বদ্ধতা
পারোনিতো এগুতে মানুষ, যেখানে এসেছি রেখে
সেখানেই আছতো
পারোনিতো এগিয়ে যেতে এক ধাপও
কেন তবে ভাঙতে চাও
কেন পুড়িয়ে ফেল সোনালি স্বপ্ন
ঘি ঢেলে আগুনে কি সুখ আছে?
স্বপ্ন পুড়িয়ে উল্লাস কর
মহুয়ার মাতালিক সুবাস পান করোনি তুমি
বেফাস আগডুম বাগডুম ইতিহাস খেয়ে বেঁচে থাকা
তোমার কি দোষ আছে বল? আমিইতো স্বপ্নের কারবারি
ধান দিয়ে জল কিনি; জল দিয়ে রক্ত।
শুনেছি সেই প্রাকৃতের গান, অনার্যের গ্যাঁও গলা
সেই সুর বহন করি জন্ম-জন্মান্তর
জেনো তবে, চর্যাতেও ঠাঁই আছে চৌর্যতা
যুক্তির বিছানায় আচুম্বন করে গেছে পিতাত্তোর পুরুষ
চেয়ে দেখো আজ টাল মার্কেটে আদর্শ গৃহশিক্ষক হয়ে আছি
পাতার ফাঁকে এখন ফল আর্মিওয়ার্ম
চোখ টিপা, ঠোঁট কাটাকাটি, জমানো পারফিউম চড়া দাম
শাসনের বালাই নাই, গ্রহণে রাজত্ব
আপন ঘরে সিঁধ কাটি; অন্তঃসার শূন্যতায় হুতোম পেঁচা
এই গ্রহের আতিথেয়তা করবে যদি
চোখ মেলে দেখো রাজা
রক্তে রাঙানো ছিলো সমুদ্রস্রোত।
উদ্দাম তারুণ্য, বক্রতায় প্রশান্তি খুঁজে যায় নগ্ন যৌবন
পথ হারিয়ে আবোল-তাবোল,
তুমি ভাবো রসিকতা, যাত্রা মঞ্চে ভার চরিত্রের দেবদূত
কম্বলের নিচে জমে থাকা সুখ তোমার নয় হে
অধিকার ছেড়ে দেবার আনন্দ; সেতো অমৃত
তার কি তুলনা আছে কিছুতে
লাশের উপরে বেত্রাঘাত করো –
কাপুরুষতায় কতকাল কাটাবে নিমকহারাম
প্রাপ্তির স্বাদতো পেয়ে গেছি প্রথম মৃত্যুতেই
কাঁটাতারের গল্পেও যদি হুশ না ফিরে
একবার তবে ঘুরে এসো ট্যাবু-টোটেমের দ্যাশ।
মুছে ফেলো আমাকে, ছিঁড়ে ফেলো বোতাম শার্টের
অভিযোগ কিছু নেই
আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসে যাই
বারংবার।
চৌপায়ার হাসি
প্রতিদিন ভোর হয়
হেঁটে যাই ভোর হতে ভোরে
এখনো গায়েন গাইছে গান, সুরহীন কণ্ঠতারে।
ডালে ডালে বহুকাল কাটালে কোকিল
আর কি উপায় আছে বলো কিছু
গাছের পাতা ঝরে যায় রোজ, নেইতো কেহ পিছু।
বধূর চুলে লাজ খুঁজে যাও বেহায়া পুরুষ
এমনি তুমি হে –
নকল মালের খনি সর্দার; প্রস্থান পশ্চাতে
শেষ অংকের শেষ দৃশ্য অজানাই থাক
কুশিলব সংলাপের মেজাজ ভারি, বন্ধও হয়েছে ঢোল আর ঢাক।
মিথ্যে রাশভারি লোক
ধ্যানে দেখো, চৌপায়া মিটমিটি হাসে
অন্তর কেটে খানখান, রঙিন সমুদ্রস্রোত
কে বলে মুখে কথা-
সিন্দুকে রাখা গোখরো কাহিনী, সেখানেই চাবি আঁটা।
হাসনাহেনার ডালে চোরের বসতি- আমানের বচন
আমরা চোর খুঁজি, চোর খুঁজি; গল্প রচি-
পান্ডুলিপির গায়ে ধুলোর চাদর এঁটে হাসিমাখা মুখ
ভুলে সব শাসনের কথা; গ্রহণে রাজত্ব
ভোগ করে যাই, যা কিছু সব; তোমার দাসত্ব
এবং দেখে থাকি
দেহের ভেতরে ঘাস, ঘাসের ভেতরে দেহ
পতিত জমি রক্ষাকবচ, জমির চাদর জড়িয়ে গায়ে
ঘন সুখের ওম ঝরে।
পানি দিয়ে মাছ ঢাকি, কখনোবা মাছ দিয়ে পানি
শেষ বিকেলের জনসভা, করতালির তুমুল বর্ষণ
তারপরে কিছু নেই, নতুন ইতিহাস।
উঁইয়ের ঢিবিতে বসতবাড়ি, বাড়ির ভেতরে জেলখানা
মুদ্রার জনক হালিবুড়া, কয়েদির পোশাকে সুদর্শন পুরুষ।
ধবধবে ফর্সা কথামালার মাতালিক সুবাস
খেয়ে যায় চিনিগুড়ার ঐতিহ্য।
তুমি আমি আমরা- ঝাঁঝালো কণ্ঠ
ঘাম হয়ে শুকিয়ে যায় গূহ্যদেশে।
স্মৃতির ঘরে আলো, আলোর ভেতরে ঘন অন্ধকার
বেমালুম নির্জীব হয়ে বসে আছি
মিছিল আসছে, হাত উঠছে, ঠোঁট নড়ছে
দেখছি; এর কিছুই শুনছি না, বলছি না।