শিল্প মানেই অমোঘ রহস্যের আবর্তে আপনার চেতনাকে আলোড়িত করবে। শিল্পের অন্যতম সমৃদ্ধ ধারা হচ্ছে আলোকচিত্র। যার আলোছায়ার খেলা দর্শনার্থীদের ভাবনার খোড়াক জোগায়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলোর ইশকুলের ৭৫ টি উৎকর্ষ চক্রের মধ্যে একটি হচ্ছে ফটোগ্রাফি কোর্স। ফটোগ্রাফি কোর্সের ৮ম ব্যাচের কোর্স সমাপনী প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয় ২ জুন। উদ্বোধন করেছেন আলোকচিত্রী নাফিস আহমেদ নাদভী। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায় বিজয়পুরের মৃৎশিল্প শিরোনামে প্রদশর্নীতে ৮ম ব্যাচের ৫৪ জন নবীন শিল্পীর ৫৪ টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে প্রতিদিন বিকাল ৪টা হতে রাত ৯টা, সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন তা সকাল ১০টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত। ৩ জুন থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৬ জুন ২০২৩ পর্যন্ত।
অতিথিবৃন্দের প্রদশর্নীর ক্যাটালগ উন্মোচন উদ্বোধক- আলোকচিত্রী নাফিস আহমেদ নাদভী ও অন্যরা
মৃৎশিল্প আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যেশিল্পে প্রতিটি মাটির দানায় জড়িয়ে আছে মাটিবর্তী মানুষের যাপিত জীবনের গল্প। আধুনিক সভ্যতায় শিল্পায়নের থাবায় দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে এ শিল্প। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর হলো মৃৎশিল্পের গ্রাম। এখানকার পাল সম্প্রদায়ের লোকজন বহু বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছেন অতিপ্রাচীন এই মৃৎশিল্প। এখানে গভীর ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে নিপুণ হাতের কারুকাজের মাধ্যমে কারিগররা তৈরি করেন নানা তৈজসপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী।
অতিথিবৃন্দের সাথে আলোকচিত্র চক্রের সদস্যরা সঞ্চালক মেসবাহ্ উদ্দিন আহমেদ সুমন
কুমোরেরা হাতের খেলায় কাদামাটিতে গড়ে তোলেন একেকটি মনোমুগ্ধকর অবয়ব। কাদামাটির শিল্পরূপ। দেশ তো বটেই, দেশের বাইরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানে যাচ্ছে মাটির তৈরি এসব পণ্য। অনেক সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পীদের সংগঠন ‘রূদ্রপাল সমবায় সমিতি’। নবীন আলোকচিত্র শিল্পরা বিজয়পুরের মৃৎশিল্পীদের নানান কাজ ও জীবন বাস্তবতার চিত্র ফ্রেমবন্দি করেছেন নিপুন প্রেমে ও দরদে।
প্রদশর্নী দেখছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম-পরিচালক(প্রোগ্রাম) এবং কোর্সটির কো-অর্ডিনেটর মেসবাহ্ উদ্দিন আহমেদ সুমন বলেন-বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘আলোর ইশকুল’ কার্যক্রমের একটি হচ্ছে ফটোগ্রাফি কোর্স। আলোকচিত্র বিষয়ে মৌলিক ধারণা দেওয়া ও অংশগ্রহণকারীদের ভেতর আলোকচিত্র সম্বন্ধে শৈল্পিক উৎসাহ জাগিয়ে তোলা এই চক্রের লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন- আলোকচিত্র প্রশিক্ষণের ৮ম আবর্তনের সদস্যদের এবারে প্রয়াস ছিল কাদামাটির শিল্পের জগতকে অনুধাবন করা, মৃৎশিল্পীর জীবন ও কর্মকে ক্যামেরায় তুলে ধরা। মাটির মন্ড তৈরি থেকে যন্ত্রের ছাঁচে কিংবা হাতের নিখুঁত নকশায় দৃষ্টিনন্দন মাটির শিল্পকর্মে রূপান্তরিত হবার প্রক্রিয়া ও মৃৎশিল্পীদের জীবন বাস্তবতার চিত্র ফ্রেমবন্দি করেছেন ৫৪ জন নবীন আলোকচিত্রী। আমরা খুব দ্রুতই ৯ম আবর্তনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করবো।
কোর্সে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ আলী মুর্তোজা বলেন-কোর্সটি করার পর আমার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। এখানকার শিক্ষকরা আমার মধ্যে শিল্পের একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ছবি তোলার, ভিন্নভাবে দেখার, চিন্তা করার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন। আমি নিয়মিত ফটোগ্রাফি চর্চার মাধ্যমে আমার এ ধারা অব্যহত রাখবো।
কোর্সে অংশগ্রহণকারী আরেকজন দিবেন্দু সিংহ বাপন বলেন- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের একোর্সটির মত ফটোগ্রাফির বেসিক কোর্সের এমন সমৃদ্ধ কোর্স আর কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না। এখানকার শিক্ষক, কোর্সের সাথে যুক্ত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তাবৃন্দ অতন্ত আন্তরিকতা দিয়ে কোর্সটিপরিচালনা করেন। শিক্ষকবৃন্দ দরদ আর যত্ন নিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন। যেকোনো সময় তাদের কাছে শেখা যায়। তাঁদের কখনো বিরক্ত হতে দেখিনি।
কোর্সটি পরিচালনা করেছেন আলোকচিত্র প্রশিক্ষক মীর শামছুল আলম বাবু। প্রদর্শনীর কিউরেশন করেছেন আলোকচিত্রী কে এম জাহাঙ্গীর আলম। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে মুখরিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালা। নবীন আলোকচিত্র শিল্পীরা বিশ্বাস করেন, তাদের যৌথ প্রদর্শনীটি প্রকৃতভাবেই সফল হবে যদি দর্শকরা আসেন, দর্শকদের চোখে মৃৎশিল্পের সৃজনশীলতায় ঘোর তৈরি হয় এবং বিলুপ্ত প্রায় এ শিল্পটি রক্ষায় সরকার বা যেকোনো সংগঠক যদি ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে।
আলোকচিত্রী : নাসির খান সৈকত ও মেসবাহ্ সুমন।