বিভিন্ন বসন্ত
এই অজস্র অচেনা বিভিন্ন মুখ নিয়ে কেবলই খসড়া জীবন
জুড়ে দিলে ধেয়ে আসে বিরাণ ভূমির গাঢ় অন্ধকার মাঠ;
মাঝেমাঝে আয়নিক স্মৃতির সংরাগ থেকে আমাদের ঠোঁট
ফুটে ওঠে মুহূর্তের দানায়, তবে ঠোঁটের মদিরায় বোধন
এ উড়ান শেষে অপেক্ষার দিনগুলো মিলিয়ে যায় শূন্যাঙ্কের
খাতায়, সেদিনের গোপন হাওয়ার চুম্বনে সুনৃত প্রতিগমন;
শীতের উল-কাটা বুনতে বুনতে গোল্লার আয়ুর অভিগমন
শেষে হলে আমাদের প্রেম ফুরিয়ে যায় কয়েক বসন্তের পর
মার আঙিনায় বিকেলের মতো হানা দেয় দূরসম্পর্কের মরাল
হলুদ বসন্ত উঁকি দিয়ে ছড়িয়ে দেয় আমাদের অভিধর্মকোষ;
তখন ঝরাপাতার আগাম ঘুম মুছে দিতে হয়, যেন প্রদোষ-
কাল আমারই মুখের ভিড় থেকে বুনোহাঁসের পলকে-আড়াল
আমরাও হাসতে জানি ভাঁটফুলের মওসুমে, অথচ ভুলে যাচ্ছি
মউলের মায়ান-আঘ্রাণ, তবে হাসতে হাসতে বিভ্রমের হারাচ্ছি।
উড়োমেঘ আর ব্ল্যাকডায়মন্ড
মনে কর, পৃথিবীর শাদামেঘ পড়ে আছে শাদা সিল্কের শাড়ি
তাই আমাদের যমজ আয়নায় খোলা থাকে আকাশের ফাঁড়ি
এভাবেই মনে করি, আমাদের ভোর-হাওয়ায় ভাসানো সুদূর
তুমিও ছায়াপথে হেঁটে নিখোঁজ পারাপারে হলে ফেরার দুপুর
এই বর্ষাকাল চলে গেলে, বাবলার গাছ ভরে ওঠে লোধ্ররেণুয়
তবু তাঁবুর মেঘেরা ছেঁড়া ছেঁড়া মুহূর্ত-দিন ওড়ায় বাদামি ছায়ায়
কী দিয়ে রোদের অলস দুপুর, একদিন কিনে নিল সেই নীলাকাশ
মেঘের ময়ূর নাচে মেঘের খুশিতে, যেন অদ্বিতীয় নুপূরের দীর্ঘশ্বাস
বর্ষায় বেজান বেজে ওঠে ব্যাঙের ঘুঙুর, নিক্কন নিঙড়ে উপচায়
প্রেম, চুমুর নুন থেকে নির্মিত বালির মিনার কী দারুণ অভ্রময়;
নাভির নিচ থেকে ওঠে আমাদের নরম-গরম অনুভূতির সফেন,
তারপরে শাদা মেঘচূর্ণ হয় জলে, ভেজালো ব্যক্তিগত লেনদেন
স্বপ্নের ঘোরে কেউ রেশমি রুমাল নেড়ে ডাকে, ঘুমের রাজহাঁস
সাঁতার কাটে হৃদয়-পুকুরে, তুমি, কালো অক্ষর অম্লান ইতিহাস।
সংক্রান্তি
এ বিপুল মাহূর্তিক সমুদ্রের কাছ থেকে এখনও মেঘের
ইঙ্গিত বুঝতে পারি নি, জানি না সান্ধ্যভাষায় জলের
রঙ কেন বাদামী মনে হয়, লোবান আর রক্তকে নিজের
অক্ষর ভেবে সাজিয়ে রাখি শাদা শিফনে, মেনে নিই
এ জীবন খসড়া খেয়ালের জীবন, দৃশ্য আর দৃশ্যান্তর
এক-একটি রঙিন ঘুড়ির জৌলুশ পেরিয়ে বা ফুরিয়ে গেলে
আমরা বড় হয়ে উঠি, পিছনে পড়ে থাকে নাটাইয়ের দিন
সেইসব বিদায় ব’লে হাত নাড়ে, আহা! শৈশবের উৎসব
হঠাৎ হঠাৎই স্মৃতি-মেদুর বিদ্যুৎ থেকে ভাসান ছেলেবেলা
সংক্রান্তিতে আসর জমে পুরনো সেই ঢাকের বাদ্যি-বোলে
ফিরে ফিরে শিঙের নিনাদ বাজে, ধোঁয়ার গাজন ওড়ে…
দারুচিনির দিনগুলো
দারুচিনি ঘ্রাণের দিনে এলাচি হাসি খুলে পড়ে প্রাক্তন প্রেমিকার ঠোঁট থেকে। এদিকে ধোঁয়ার চিমনি থেকে উড়ে যায় বাতাসের কুহক। হারিয়ে যায় ব্যর্থ রোঁয়া-ওঠা আমন ধানের মতো আভাদিপ্রেম। প্রমুখ পুরীষঘ্রাণের সাথে মিশে যায় ইশারার পুকুর, পশ্চিমপাড়ার পেয়ারা বাগান। দীর্ঘশ^াসের প্রতিবেশী নিসঙ্গতায় রাতের কানে বাজে মুশমুশে ব্যথার বিকেল। ভালোবাসার যাদু খুলে গেলে হারিয়ে যায় শাদা পালকের বিভ্রম। আর স্বপ্নকোষে ভ’রে ওঠে রসুনের আঘ্রাণ।
যমজ অনুভবের আস্তিনে লেগে থাকে দারুচিনির শরীরজ গন্ধবাগান। অথচ পেন্ডুলাম থেকে খসে পড়ে সেই এলাচি হাসির দিন। মনের কার্নিশ থেকে উড়ে যায় মেঘের অভিমান, অলৌকিক প্রেমের জলযান। থৈ থৈ জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যায় ঘাসফড়িঙের চিঠি। এই রকম আচানক দিনসমগ্র থেকে মুছে যায় পেয়ারাফুলের হাসি, হলুদ-বসন্তের প্রাকার। সেইসব ঝিরিঝিরি ঝাউপাতাদের পাতানে, স্বপ্নকেশরে বেগুনি প্রলেপের হারানো ঘ্রাণে প্যারাট্রুপসে উড়ে আসে জলের অতল প্রেমে…