৪_ প্রথম চীনের মাটিতে কুনমিং-এ পদার্পন
আমরা চীনের Kunming Changshui International Airport-এ ল্যান্ড করলাম। ল্যান্ডিং ভালোভাবেই হল। ঢাকা থেকে কুনমিং দুঘন্টার পথ। আমরা এখানকার স্থানীয় সময় ছটা বিশে কুনমিং-এ পৌঁছলাম। ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারিং হচ্ছে। সবারটা হয়ে গেল। কিন্তু আমাদের সাথে থাকা ড. মোহাম্মদ জামান, বাংলাদেশী কানাডিয়ান সেফগার্ড স্পেশালিন্ট-এর ইমিগ্রশন ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাচ্ছেনা। তাঁর পাঁসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রশনের মেয়েটি অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা করছে। কিছু বলছে না। ক্লিয়ারেন্সও দিচ্ছে না। সে ফোনে কারও সাথে কথা বলছে। বললো অপেক্ষা করতে। এরপর আমাদের কানেক্টিং ফ্লাইট নানজিং-এর উদ্দেশ্যে। সকাল আটটা পঞ্চান্নতে। আড়াই ঘন্টা আমাদের অপেক্ষমান সময়। এ সময় আমরা ওয়াশরুম ও ফ্রেশ হয়ে কফিসহ কিছু হালকা খাবার খেলাম। আমরা খবর রাখতে লাগলাম ড. জামান সাহেবের ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের কি হলো। উনি এযারপোর্টে বসে ইমেইল করলেন স্টাডি ট্যুর ফ্যাসিলিটেটরের সাথে। রিপ্লাই এলো। আমরা তো কিছুটা টেনশনে পড়ে গেলাম। কারণ, ড. জামান বিশ্বব্যাংকের সেফগার্ড স্পেশালিস্টদের সাথে কাজ করা একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করেছেন। প্রায় তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা। আমরা যেখানে যাচ্ছি নানজিং-এর হোহাই ইউনিভার্সিটির National Research Centre for Resettlement (NRCR)- পরিচালক Dr. Go Quing Shi –এর সাথে তাঁর আগে থেকেই পরিচয় রয়েছে। তিনি সেখানে আগেও প্রোগ্রাম করেছেন। তাঁর ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাচ্ছে না জেনে আমরা খুব বিস্মিত হলাম। তিনি ক্লিয়ারেন্স না পেলে আমাদের স্টাডি ট্যুরের কি হবে সেটা ভেবেও একটু চিন্তিত হলাম।
চায়নাতে ভাষা একটা বড় সমস্যা। অনেকেই ইংরেজী বোঝে না। এভাবে আমাদের ফ্লাইটের সময় হয়ে এলো। কিন্তু ড. জামান সাহেব আমাদের ফ্লাইটে যেতে পারলেন না। উনি থেকে গেলেন কুনমিং সিআই এয়ারপোর্টে। উনি বললেন, আপনারা যান, চিন্তা করবেন না। আমি ব্যবস্থা করে আসছি। আমরা নানজিং-এর নানকিং-এর Nanjing Lukou International Airport উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের MU 5791 নং ফ্লাইটে। দু ঘন্টা পঁচিশ মিনিটের জার্নি। মনে মনে সবার একটা টেনশন কাজ করছে ড. জামান সাহেবকে নিয়ে। সকালে প্লেনে নাস্তা দিল। খেলাম। চীনের প্রথম খাবার। খেতে মন্দ লাগলো না। চীনের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাচ্ছি। এক বিশাল দেশ চীন। চীনের রয়েছে ২২টি প্রদেশ, পাঁচটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল, দুটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি মিউনিসিপ্যালিটি। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম আয়তন (৩৭, ৩৭,৮৭৭ বর্গমাইল) বিশিষ্ট দেশ।
আমরা যাচ্ছি নানজিং-এ। চায়নার পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংশু প্রদেশের রাজধানী নানজিং ইয়াংজি নদীর ডেল্টায় অবস্থিত। নানজিং চায়নার পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। তৃতীয় শতাব্দী থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত নানজিং চায়নার বিভিন্ন ডাইন্যাস্টি, কিংডোম এবং গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের রাজধানী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ কারণে এ শহরটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, গবেষণা, রাজনীতি, পরিবহন নেটওয়ার্ক ও ট্যুরিজম ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম অভ্যন্তরীন নৌবন্দরগুলির মধ্যে একটি। নানজিং চায়নার পনেরোটি Sub Provincial City-র মধ্যে একটি। নানজিং শহরটিকে “Beta” classification যুক্ত Global City হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নানজিং-এ রয়েছে অনেক উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট রয়েছে। নানজিং বিশ্ববিদ্যালয় চীনের ১০০টি Key University-র মধ্যে তৃতীয় এবং Nature Index-এর Ranking-এ পৃথিবীর সেরা দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি। নানজিং হাজার বছরের পুরনো চীনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর যেটি চায়নার চারটি প্রাচীন রাজধানী শহরের একটি। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের যাত্রা শুরুর পর থেকে এটি জিয়াংশু প্রদেশের রাজধানী হিসেবে রয়েছে। এর গুরুত্বপূর্ণ হেরিটেজ সাইটের মধ্যে রয়েছে Presidential Palace, Sun Yat-Sen Mausoleum.