কোনো এক আত্মজাকে
আত্মজা, এসো,
তোমাকে নেবো এক অভূতপূর্ব
ইতিহাসের কাছে
একুশ নামের গৌরবের সূর্যটা
যেদিন জ্বলেছিল
ফাগুনের আগুনে, রক্তের প্লাবনে।
যার আগে তামাম-দেশ জুড়ে ছিল
ঘুটঘুটে আঁধার এক অগৌরবের।
চেয়ে দেখো, করতলে লেগে আছে
অ, আ, ক, খ, বর্ণমালার যাদু।
মুঠো খোলো আত্মজা,
কুড়োতে হবে কাঠগোলাপ, কাঁঠালিচাঁপা,
কৃষ্ণচূড়া, সোনালুর ঝাড় –
অঞ্জলি ভরে নেবে উৎসর্গের নৈবেদ্য।
দৃষ্টিতে ঘনরঙ আগুন জ্বেলে
স্মৃতিভরা প্রাণে, কণ্ঠে নেবে প্রভাতফেরির গান।
এসো আত্মজা,
নিয়ে যাবো পবিত্র দাগের সাজের মাঝে
অপরিশোধিত অপরিসীম ঋণের কাছে
দেখবে, কালোমেঘ বিস্তৃত হয়ে থাকা
শোণিতকণায় কাঁপে বেদনাগীতির তান।
কথা বলার স্বাভাবিক অধিকারও যখন
ছিনিয়ে নিতে হয়েছিল
বিমাতা-ভাষার গরাদ ভেঙে-
আকাশটা তখন আর আকাশ ছিল না
সূর্যটাও যেন ঠিক সূর্য ছিল না
বুক জুড়ে ছিল শুধু অশুভ ঘনঘটা।
নগ্নপদে এসো,
রক্তাক্ত সূর্য কোলে
মাথা নিচু করে কুর্নিশ করা
ধবধবে শাদা মিনারে-
শিশুর ঠোঁট যেমন ঝুঁকে
উন্মোচিত মাতৃস্তনে।
দেখাবো,
কী করে আকাশটা সম্পূর্ণ হয়েছিল
প্রত্যয়দীপ্ত সূর্যটা উঠেছিল-
বাংলাদেশের
বাংলাভাষীর
লাল-সবুজের
মুখের বুলির!
চোখ মেলো, আত্মজা
প্রাণভরে দেখো
অধরে শ্রাবণ-অরণ্য মূক হয়ে
থেকে থেকে বটের কোটরে
জাগে অঙ্কুরিত ভাষাজ্ঞান।
অনুভব করো, গভীরে
মাথা নোয়ানো আজ বিশ্ববাসীর বাংলার
সুবিদিত ইতিহাসের কাছে
প্রেরণার সূর্যের কাছে
আমাদের একুশের কাছে।।