সিরাজ সরা চকোরী।।
রাতের কণ্ঠা ধরে শিরার মতো শব্দে ব্রাহ্মী খরজিভ থেকে মহাকাল বলে ফেলল অকস্মাৎ
– আর তো ফেরা যায় না অনন্ত!
হাত আলগা হয়ে খুলে আসা আউলবাউলের দিলচকোরী হে সখিন, দেখো আরো ত লোক আছে ঋতুদেহে দ্রবীভূত, মাঠের পাকা হলুদ খুলে লাগিয়ে দেয় যারা খিন্ন, শিশির ঝেড়ে পুরাতন করে ফেলে একা প্রান্তরের শোক গিলাহ।
গলার বাক্সে বর্ষা বসেছে বেদম। সে জল অন্তর্বাহিনী হোক যার ধর্মনাম লাভা। ব্রহ্মাণীবর্ষ জুড়ে আলোর শলা, রুহ রুহ নামে বৃষ্টির শরীর বুঝে মাটিতে গেঁথে গেল সেই ফলা ফালা বিদ্যুৎ, পুনর্বয়ব।ফিঙেরা আচ্ছন্ন ঘিরে রাখে উক্ত আঁচ, দাঁতের শ্বাপদ কামড়ে কামড়ে ছেনে আসে শস্যবতী শরীর।
আত্মার বন্দিশে হা হা উথাল হাওয়া পাক খাচ্ছে, চিঁড়েকোটা আওয়াজ কাটছে কেউ আর বার বার কিসের দমফাটা আকুতি যেন ঘনিয়ে আসে শিরাস্নায়ু কাঁপিয়ে।কতখানি দূরবর্তী হবে তুমি তাদের আত্মীয়া? তোমার আত্মার গোলাপে অঙ্কিত হয়না একটিও ঘুঘু পাখির ডাগর! এমন কি চরাচর যার কাশের বনে পালক ফুরায় না এহেন অঘ্রাণে, হিমবুক ঝরে মরে অপার ধোঁয়াশ অলক্ষ্য তিতির…
বেতসলতার মতো, তারপর আরো নি:শর্ত নমন, তারপর মস্তিষ্কের খাঁজে বসিয়ে দিচ্ছে এমন যে কোষগুলো নড়াচড়া করার আগেই শুধোচ্ছে, “তর্পণে বসলো?” প্রশ্ন স্বর বদলে অথচ বেরোচ্ছে পূর্বজগৃহ থেকে এভাবে, “অনন্ত শূন্যতা, মায়া ডাকে?”
সাদা কাগজের আতঙ্কী গুটিয়ে আসে একলব্যের শিহরে, স্বাক্ষরহীন অস্থির মহাকাব্যে। কাঁড়বাঁশের গন্ধে বিভোর বনজ অর্জুনেরা ছিলাটান উপড়ায় । পিলচু হাড়াম বাধ্যত দ্রোণ কেউ, মানব মাংসের বিকল্প রাখেনি এযাবৎ কোন বিবর্তন। উত্তরাধিকার অগ্নির ধর্ম খুঁজে নেয়। দিন গত হলে সবারই সন্ধ্যা এক; তারারন্ধ্রে খুব ঘষে আসে তাবৎ ভাষাবিদের মুনশিয়ানায় আশ্চর্য সরোদ ।
রাত, প্রকৃত প্রস্তাবে মন্বন্তর সাজিয়ে রাখে নশ্বর বুভুক্ষু স্নায়ুদের পাতে, বালি পড়ে এলে এক পূর্ণ আওয়ারগ্লাস। শরতের তেতো চাঁদ- মুখোমুখি যেটুকু গলে আসে গলায়, শবনম অথবা গন্তব্যশরাব…
প্রজ্ঞাপারমিতা বৃঃ ।।
হোমারের বাড়িঘর বলতে কিছুই ছিল না
আর দান্তেকে গৃহী হওয়া সত্ত্বেও গৃহ পরিহার করতে হয়েছিল।
– কবির দেশান্তর, বের্টোল্ট ব্র্রেশট
গঙ্গা থেকে পদ্মা, পদ্মা থেকে মেঘনার মোহনায় বিসর্জন
– এই তো উড়াল জলের, ফিরে আসে মেঘ হয়ে বজ্রযানীর চোখে
ইমনসন্ধ্যায় চুল্লিতে প্রিয়ঙ্গুশাখা আর কাকডুমুর ডালের সুগন্ধে যে মাধব চিতায় সমর্পণ
কালঘুমে ক্যাথার্সিস, স্বর্গীয় আগুন আধান করে চৈতন্য-দিব্য অমরতা
কাকে বলো ভস্মগর্ভা? তোমার দিন কাটবে তাকে নিয়েই তুলসীতলায়
আধৃত মাধবীলতা হাতে অনন্তের দরবারে যজ্ঞের উপবীত
কড়ি সঞ্চায়িত দোলায় মৃত্যুজয় বোধিসত্ত্ব
একাধারে তিনি এখন গৃহী ও অতিথি
পুনরাবর্তনময় ভঙ্গি ও বিন্যাস চিন্ময় শক্তি
শালপাতার আগুন ভরা করপুট তারা
জন্মদাগ-রক্তের ভেতর জবাফুল
মাথার ভেতর দাঁড় বায় দিব্যদেহ
নাভির ভেতর বাবার রোদ ঢুকে পড়ে
ভূমিচক্রের টোটেম ও কৌমজীবন
বাড়ির আউতায় স্মৃতিরাস, আমআঁটির ভেপু
মাকড়শার জাল বুনে আলোছায়াময় আত্মকথন
যেন ওলান থেকে বীজমন্ত্র আজলকাজল মায়ামদির শূন্যতা এবং করুণা
দেহেই তোমার মহৎ মার্গ বজ্র মোহিনী
‘ওম মনিপদ্মে হূম
আহা, মনিই প্রকৃত পদ্ম’
বোধিচিত্তের পরমানন্দ রথ সহজ
‘এস জপহোমে মন্ডল কম্মে
অনুদিন আচ্ছসি বাহিউ ধম্মে।
তো বিনু তরুণি নিরন্তর ণেহে
বোধি কি লব ভই প্রণ বি দেঁহে। ’
ব্রহ্মের জন্ম মূলত ঘোষণা করে
জন্ম যেমন মরণও তেমনি শূন্যচিত্ত
ভাষাই মানুষের একমাত্র আবাসন
তাই শ্মশানের অন্যনাম পিতৃবন
রক্তকুমারী।।
তোমার চুলের সুবাসের ট্রেইল ধরে
এখন এক থতমত শহরে, ব্যথারা গিরগিটি
বুনো যন্ত্রণা যেন বাইশ্যা ছড়ার জোঁক
খসে পড়ে গামছা পিচ্ছিল ঝিরিপথে
চেকলায় আছড়ালে ক্যারিক্যাচার, হাত কই হাত ধরার?
ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস উপহাস, ব্ল্যাকহোলের গোঙানি
মানুষের জঙ্গল, তবু কেউ কি আছে দেখাবে সিঁথিপথ?
এই বুকের কচ্ছপ মগজের গিরিখাদে শেওলায় হাটে
বর্ষা র ঝিরির মতো ব্যথারা কথা বলে, আসলে তোমারে ডাকে
রক্তেশ্বরী মন্দিরের তুলসী তলায় এসো কায়াকিং শেষে
বুকের ভালবাসা বেটে দিব তোমার ক্ষতে