রক্ত আর কৃষ্ণচূড়াফুল
মাতৃভাষার ইতিহাস জানতে
মেয়েটি কানাডা থেকে ঢাকা এসেছে,
ওর পূর্বপুরুষ একদা বাঙালি ছিল।
কানাডায় বাঙালিরা গায়,
`কী আঁচল বিছায় আছো বটের মূলে নদীর কূলে কূলে…
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!’
কী মিষ্টি সুর, মধুর কণ্ঠ আর সমবেত আবেগ
ওর পূর্ব পুরুষ গাইতো, ‘পাক্ ছার জমিন সাদ বাদ’
নাহ, ভুল বলা হলো, জোর করে গাওয়ানো হতো।
তারপর কী দারুণ নিগ্রহ, ওরা ভাষা কাইরা নিতে চায়,
” ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়!”
দেয়নি কেউ, জবরদস্তি করে ধরে রেখেছে বাংলা
পাখির বুলি, মায়ের ভাষা, মনে শান্তি ভালোবাসা!
ছন্দপতন
যে প্রেম উড়ন্ত চুম্বনে মিলিয়ে যায়,
একদা তার সাথে দোস্তি করেছিলাম
আমার ঘর গৃহস্থ্যের বারান্দায়
দুঃখরা খেলে শোকের খেলা।
ভালোবাসা শূন্যে মিলিয়ে গেলে
হিসেবের খাতাটা কেবলি নিরেট
সাদা কাগজ বলে বোধ হয়।
ঘোলাজলে কাগজের নৌকাগুলো
শুধু খাবি খায় কূল কিনারাহীন।
আমাদের প্রতিটি দিন এখন
রেলগাড়ির চাকার মতো। যে
যেদিকে টানে সেদিকেই চলে যায়।
টোকাই
সমুদ্রস্নান শেষ হলে পাখিরা ঘরে ফেরে
অনেকের ঘরহীন ঘরে ফেরার ত্বরা নেই,
তাই সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে শুকটির ব্যবসা খোঁজে।
কেউ কেউ পরিযায়ী পাখির মতো
কতকদিন স্বচ্ছ বালির উপর ঘুমাতে গিয়ে
পুলিশের দাবড়ানি খায়।
ওরা টোকাই,
ওদের কেউ কাজ দেন না ভাই!
পেট শুধু দু’বেলা দু’মুঠো ভাত চায়।
অনন্ত পৃথ্বীরাজ– কবি। জন্ম ৩০ অক্টোবর ১৯৮৭। পেশায় শিক্ষক।
প্রকাশিতগ্রন্থ : কাঠপোকা (২০১৬), বিষণ্ণ বিকেলের গল্প (২০১৭),
আরিফ নজরুলের কবিতা : স্বপ্ন সেঁকে বাস্তবে ফেরা (গবেষণাগ্রন্থ), ২০১৭,
রমনা পার্কের ইতিহাস (গবেষণাগ্রন্থ), ২০১৮।