কদম পেঁয়াজের ঘ্রাণ
চাচীমা, বাড়ি আছো কি?
আমি তোমাদের শিমুল রানী।
বহুকাল পরে খুব চেনা স্বরে
মূক হলাম ক্ষণিকের তরে।
চৈত্রের দুপুরে কদম পেঁয়াজের ঘ্রাণে
জমে থাকা কথারা
ফিসফাস করে মনে।
আমাদের শিমুলতলী গাঁয়ে
একটা শিমুল গাছ ও ছিলো না
ছিলো শিমুল নামের এক ললনা।
গাঁয়ের বয়স যখন একশো বিশ
শিমুল তখন শুধু উনিশ।
সারি সারি চারার সমাবেশ ছাড়িয়ে
কদলী ফলের সারণী পেরিয়ে
উঁকি দিতো আমাদের দোতলা ঘর।
রাস্তার কোল ঘেঁষে আমাদের ঘরে
মস্ত জানালা ছুঁয়ে আলো পড়তো দোরে।
প্রভাত বেলায় কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে
রেশম-কোমল চুল দুলিয়ে
শিমুল আমার জানালা পেরোতো
মুখখানা বাঁকিয়ে!
জানালায় উঁকি দিয়ে দেখতাম,
উঠোনের বাঁশের বেষ্ঠনী হতে
অপরাজিতা মুক্ত হয়ে
শিমুলের কান ছুঁয়ে আছে।
নরম ছোয়া পেয়ে
ঘুম ভাঙছে পারিজাতের।
দিনমান কত কথা উড়িয়েছি
জানালার কপাট খুলে
পারিনি পৌঁছাতে জানালা পার করে শিমুল তলে!
আমি এক নিসাড় কাদায় পা রেখে
ভাটি পথে হেঁটে
কবুতরের মতো খুঁজেছি নিজের ঘর
ঘরকে করে পর!
বিম্ব
এই যে তুমি বেড়ে উঠছো
তোমার উচ্চতা বাড়ছে
তোমার চুলের ঘনত্ব বাড়ছে
বাড়ছে মৃদুহাস্যের প্রতাপ।
তোমার চোখের গভীরতা বাড়ছে
তোমার ওষ্ঠের কম্পন দিক বদলেছে
তোমার অঙ্গ বাহারি সৌষ্ঠবপূর্ণ
উষ্ণহৃদয় কখনো কখনো বুনো।
তোমাকে কোন অভিধা দেবো না
তোমাকে ক্লেশ দেবো না
তোমাকে দেবো সোপান।
তুমি আরো বেড়ে উঠবে
নিজেকে ছাড়িয়ে যাবে
নীরদের সাথী হবে।
তোমার পথ হবে
তুলোর মতই মসৃণ।
প্রেমের ও বোধের টানাপোড়েনে
তোমার মনোজগত আরো জ্যোতির্ময় হবে
তুমি টের পাবে
তুমি আমার দ্বিতীয় সত্তা
তুমি আমার জন্যই বেড়ে উঠছো।
তুমি অনুভব করবে
তোমার চারিধারে অনটন
হৃদয়ের আভিজাত্যে তুমি রাজাধিরাজ
তোমাতেই শোভন সিংহাসন!
শিরীষ
সামরিক কায়দায় চলা জীবনে
আমি কতটা নিঃসঙ্গ ছিলাম
তা কেবল আঙ্গিনার শিরীষ গাছটা জানতো।
শিরীষ ছিলো বাড়ির সবচেয়ে পুরনো
যখন এই জমিখন্ডের চৌহদ্দি ছিল না
উপকন্ঠের জমিন ছিলো
ভাঁটফুল ও দূর্বাঘাসের দখলে
তখন থেকে শীরিষ অশ্রান্ত দাঁড়িয়ে।
সরু বৃক্ষ হতে শিরীষ যেমন
আমার সম্মুখে পুষ্ট হয়েছে
তেমনি আমিও ওর সম্মুখে
মানুষের ভীড় হতে
দিন থেকে দিনে নিঃসঙ্গ হয়েছি।
মুসল্লীর অভাবে মৃতপ্রায় মসজিদ হতে
শীরিষ প্রতি ওয়াক্তে আযান দেয়।
তার নিভাঁজ কোমল ফুল দিয়ে
জায়নামাজ বানিয়ে রাখে।
শীরিষ প্রতিক্ষা
যদি কোনো মুসল্লীর পদধূলি শীরিষআলয়ে পড়ে!
সুমনা আফরিন-জন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়ায় থানায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-বিমূর্ত সংকেতে ভরা ডাকবাক্স। ইডেন মহিলা কলেজ হতে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। কর্মরত আছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে।