“জামায় হীরের বোতাম লাগিয়ে মানুষ তো আর সারা দিন তা নিয়ে ভাবে না, সে বোতাম হারিয়ে গেলে অবশ্য দুঃখ হয়।”
গুড আর্থ উপন্যাসটি পড়লেই বোঝা যায় এর স্রষ্টা যেনো তেনো ব্যাক্তি নয়। পার্ল সিডেনস্ট্রিকার বাক্ একজন মার্কিন লেখিকা। তিনি এত সুন্দর সাবলীল ভাষায় চীনের কৃষিতান্ত্রিক সমাজের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা অবশ্যই বিশ্বের সকল পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দেবে। গুড আর্থ ১৯৩১ ও ১৯৩২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত কল্পকাহিনী এবং এই বইয়ের জন্য লেখিকা ১৯৩২ সালে পুলিৎজার পুরস্কার এবং ১৯৩৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী মার্কিন নারী। জাকির তালুকদার উপন্যাসের ভূমিকা অংশে লিখেছেন, প্রাচ্যের জীবন এবং পরবর্তী সময়ে পশ্চাত্যের জীবন- এই দুইটি ভিন্নবৈচিত্রের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচিতি তাঁর রচনায় এনে দিয়েছে দুই সংস্কৃতির সমন্বয় এবং দ্বন্দ্বের সম্মিলিত স্রোতধারা।
বিপ্লব পূর্ববর্তী একটি দরিদ্র কৃষিসমাজের খুব সাধারণ কাহিনী নিয়ে লেখিকা সুকৌশলে সমাজের বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতা ও তার সম্ভাব্য সমাধান ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কৃষক তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে আর সেই টাকা কীভাবে জমিদারের হাতে চলে যায়। কৃষকের কাছে যা অতি মূল্যবান জমিদারের কাছে তা হয়ে ওঠে কেবল তার আফিমের খরচ। এমন অনেক বিষয়ে শ্রেণিবৈষম্য তুলে ধরেছেন।
গুড আর্থ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওয়াং লাং। কৃষক হিসাবে তার জীবন শুরু হয়। উপন্যাস এগিয়ে চলে ওয়াং লাং এর মনোভাব স্পষ্ট হতে থাকে। তিনি খুব সাধারন পরিবেশে জীবনযাপন করেন। পার্ল এস বাক্ একজন নারী হিসেবে পুরুষের যে মনোভাব তুলে ধরেছেন তা পাঠক-পাঠিকা উভয়কেই আন্দোলিত করবে।
আমার মনে হয় একটা জীবনকে সুন্দর ও পরিশীলিতভাবে অতিবাহিত করতে হলে হৃদয়ের আবেগ এবং অর্জিত জ্ঞান সমান্তরালভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদি মনে করা যায় জীবন একটা সাইকেল তবে সেই সাইকেলের গতি হল আবেগ আর জ্ঞান হবে সাইকেলের ব্রেক। এখন যদি কোনো সাইকেলের ব্রেক দুর্বল থাকে বা নাই থাকে আর চালকের মনে যদি অসীম সাহস থাকে তাহলে চালক যেভাবে সাইকেল চালাবে এখানেও আমি ঠিক সেইভাবেই ওয়াং লাং এর জীবনকে অতিবাহিত করতে দেখা যায়। তার জীবনের পথ কখনো সরল আবার কখনো বন্দুর। তবুও পথের শেষে একটা দারুণ প্রশান্তি অনুভব করেছেন। এই দীর্ঘ জীবনে কারো প্রতি অবিচার করেছেন আবার কারও প্রতি সুবিচারও করেছেন।
এই উপন্যাসের মাধ্যমে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন তা হলো আবহাওয়ার পরিবর্তন। আবহাওয়ার পরিবর্তন মানুষের মনকেও পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।
মানুষের সাথে মাটির যে গভীর সম্পর্ক সেটাও পুরো উপন্যাস জুড়ে লেখিকা বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেয়েছেন।
বনেদি, জমিদার, যাই বলো, সবারই শিকড় গাড়া রয়েছে উপন্যাসের প্রত্যেকটি চরিত্র খুবই জীবন্ত ও বাস্তব। আর এ কারনেই এই কাল্পনিক কাহিনী পাঠকদের কল্পনার জগতে থেকেও অতি বাস্তব মনে হবে।
বই : গুড আর্থ – পার্ল এস বাক্, অনুবাদ- আবদুল হাফিজ, প্রকাশনা : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ, মূল্য: ৩০০টাকা।
চন্দন পাল- শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।