জীবনানন্দ
জীবনানন্দ দাশের সাথে একবার আমার দেখা হয়েছিলো হেলুচিয়া বিলের দ্বারে অশ্বথ ছায়ার নিচে। লাবণ্য গুপ্তের সাথে তারা হাঁটছিলেন পৌষের নির্জনতম সময়ে। আবারো শোনালেন তিনি শৈশবের স্নিগ্ধ ভোরের পিতার কণ্ঠের উপনিষদের সুর। নগ্ন নির্জন হাতে ধরে থাকা কবির হাতে ভোরের কুয়াশা, নির্বাক সময়ের শ্রোতা আমি। বিনয়ের সাথে বলে ফেলি আমার মনকথা। শুদ্ধতম কবির অভিধা নিয়ে কিভাবে লেখা হলো বনলতা সেনের গল্প – যেমনটা লেখা হলো আমার শঙ্খবালার স্মৃতি নিয়ে ফেলে আসা প্রেমের আখ্যান। অঃনিশেষ বিরহ বেদনায় এঁকেছিলেন তিনি অশরীরী প্রেমের পোট্রেট – বনলতা সেন। শোনালেন তিনি ক্ষতবিক্ষত করা কবিতার শব্দমালা- এক ব্যাকুলতার সুরে…
কোনদিন দেখিব না তারে আমি: হেমন্তে পাকিবে ধান, আষাঢ়ের রাতে
কালো মেঘ নিঙরায়ে সবুজ বাঁশের বন গেয়ে যাবে উচ্ছ্বাসের গান
সারারাত, তবু আমি সাপচরা অন্ধপথে – বেনুবনে তাহার সন্ধান
পাবো নাকো: পুকুর পাড়ে সে যে আসিবে না কোনদিন হাঁসিনীর সাথে
সে কোন জোৎস্নায় আর আসিবে না – আসিবে না কখনো প্রভাতে।
যখন দুপুরে রোদে অপরাজিতার মুখ হয়ে থাকে ম্লান
যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধান
ধূসর সন্ধ্যায় সেই সেই আসিবে না এখানে;
আমরা হাঁটছি।
পেছনে লাবণ্য।
আরো পেছেনে জীবনানন্দ।
ধনুর্বিদ প্রেমিক
মেয়ে তুমি মালপাহাড়ী-
কার জন্য গাঁথছো মালা বলতো!
মাটির রঙে রাঙানো দেওয়ালেতো শুকিয়ে গেছে উল্কির ছাপ
আদিপুরুষের ভিটায় সন্ধ্যায় খোলা উঠোনে আগুনজ্বলা ডিবায়
খসে পড়লো যে তোমার জীবনের হাঁসুলি
কোথায় দেবে তোমার ফুল!
তোমার ছায়াশীতল পেয়ারাতলা ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছো মানবতাহীন অরণ্যে
তোমার সোনালী ধানখেতে এখন তপ্ত বিষের শেলের মতো
অজস্র হায়েনার কাঁটাতার
মালপাহাড়ী মেয়ে
তোমার নীল রঙের ফতায় ছোপছোপ রক্তে
ভেসে ওঠে জীবনের হাজারো গল্প-অসমাপ্ত চুমো,
দখলদারিত্বের আগ্রাসনে-রাজনীতির কালোবাতাসে
তোমার মালকোচা ধনুর্বিদ প্রেমিক কবেই মারা গেছে!
ক্যাপিটালিস্ট: দ্য ব্লাড সাকার
তোমাদের এই শহরে বিক্রি হয়ে যায় ফ্লেক্সিলোডের খাতা
যেমনটা বিক্রি হতো আমাদের মহকুমার
রূপসী স্টুডিওর অগুণতি ফিল্ম,
যুবতীর সাদাকালো পোর্ট্রটে।
হায় পুঁজিবাদের বাজার, কত কিছুই বিকোয়
বিকোয় সম্মান, বিকোয় শরীর,
বিকোয় প্রতিপত্তি, বিকোয় পরম্পরা বংশীয় নাম
শরীরের রংটাই আসল, মনটা না।
মিনিপ্যাকে তাই পৌঁছে গেছে প্রসাধন সেই সুদুর চরে
চরের গণি মাঝি সকাতরে বলে-
আফ্রিকার কালো মানুষরাও কি ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ মাখে?
ভাদুরী মওয়াল, বিষফোড়া ও থানকুনি পাতার গল্প
সে বিকেলটার কথা আমার খুব মনে পড়ে
যেদিন ম্যানগ্রোভ কাঁটায়
আটকেছিল তোমার সবুজ ওড়না
তোমার ছোটলাগা পা জড়িয়ে রেখেছিল
সেই গোলপাতার ব্যান্ডেজ।
সেই ভাদুরী মওয়াল!
তার কথা কী তোমার মনে পড়ে?
বিষফোড়ার ক্ষত নিয়ে আমাদের
পার করেছিল খরস্রোতা নদীর ফাঁদ
আমরা যেখানে খুঁজি এ্যান্টিবায়োটিক
আর সেখানে বিষফোড়ায় দুইতিন থানকুনি
প্রকৃতি ও জীবন যেখানে মিশে একাকার।
তোমার সেই সুন্দরবন আজ ভালো নেই
অঝোর কান্না তোমারি মতো যেমনটা কেঁদেছিলে
গোলপাতা মোড়ানো পা নিয়ে।
তেমনি তীব্র শ্বাককষ্ট আর বুকে
দাবদাহের ক্ষত নিয়ে গোংরাচ্ছে সুন্দরবন।
পৃথিবীতে এতো অক্সিজেন অথচ একমুঠো
অক্সিজেন নেবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায়
মানব বন্ধন হলো আজ প্রেসক্লাবে
ফেসবুক টুইটারে প্রকাশিত হলো দৃঢ়তার বন্ধন
আমরা আশায় বুক বেঁধে সহস্র কোটি জনতার
হয়ে তাদের বোধের বোধিতে চিৎকার করে
বলে দিয়েছি আমাদের কথা-
প্রেয়সী সুন্দরবন
তোমার নরোম বুকে আমরা বিঁধিয়ে দিতে চাইনা
তপ্ত বিষের শেল। হোক না সেটা রামপালে।