অন্ধ জিরাফ
দূর থেকে তাকিয়ে দেখি আমাকে;
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না
অনুমান করছি একটা উদ্ভ্রান্ত উট,
মরুর যৎসামান্য বালু লেগে আছে পায়ে
আর ঢুকে পড়ছে আমাদের এই
ধূলি ধূসর উলঙ্গ অরণ্যে।
আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলাম
ক্রমে আমি দৃশ্যত হচ্ছি আমার কাছে।
দেখলাম মুখোশ পরা একটা ক্রীতদাস
নিজেকে উপস্থাপন করছে রাজার পোশাকে।
তার মুখোমুখি দাঁড়াতেই
এক বিকট শব্দে ক্রমে ধ্বসে যেতে দেখলাম
গোয়ার পাহাড়
আর জানলা কাটা একটা উঠোন সর্বস্ব বাড়ি।
দূর থেকে তাকিয়ে দেখি আমাকে
দেখে দেখে জ্ঞান হারাই।
ভাবি এই আমি এতকাল ধরে
একটা অন্ধ জিরাফের সাথে কীভাবে কাটাচ্ছি —
এই একতারের জীবন।
পদবী
কাগজ পেলেই শিয়ালদহ স্টেশনে দেখা
অচেনা সেই নারীকে আঁকি।
তার চোখের ভেতর ছদ্মনামে বসত গড়েছে যে মৃত্যু
তাকেও আঁকি
যথাসম্ভব চেষ্টা করি তার ঠোঁটের উপর
তিলটা ঠিকঠাক জায়গায় বসানোর।
সে জানে না ;
একটা নির্বাসিত জীবন আহত হয়ে পড়ে আছে
কপালের ভাঁজে। বুকে প্রবাহিত খরস্রোতা নদীটি
আত্মগোপন করেছে প্রেমিকের ভয়ে
একটা গোপন অসুখ প্রবল দৌড়াচ্ছে …
সে এও জানে না, তার গাঢ় ঠোঁটে
আমি নিঃসঙ্গতা দেখেছিলাম
যে আমাকে আদর করে
কামড়ে কামড়ে কবিতা লেখায়।
তারপর কতোবার শিয়ালদহ গেছি
তবু সেই নারীর দেখা পাইনি
শুধু আমার নামের আগে খামচে ধরে আছে
কালহীন, প্রতিধ্বনিহীন একটা পদবী।
প্রশ্নোত্তর
ভালোবাসি! ভালোবাসি!
কাকে ভালোবাসো?
একটা যাযাবর মেঘ। আমি যার নিচে পতিত —
চিরকালীন নিরস জমিন।
কেন ভালোবাসো?
পাহাড়ের দস্যুতা জানো তো! আর নদী তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ভেঙে যাচ্ছে আমার নিবিড় নীরবতা। তার চেয়ে সে এক লুব্ধক রোমাঞ্চ আমার। তাই!
কিভাবে ভালোবাসো?
হাতে থাকা আয়ুরেখা যেভাবে হয়ে উঠে ফুলের বাগান।
কখন ভালোবেসেছো?
সেদিন আমার চোখে ছিলো জলের জন্ম। আর জান তো জন্ম মানেই ভ্রুণের হাত ধরে জীবনের দিকে ফিরে আসা।
কোথায় ভালোবেসেছিলে?
আমি তোমার আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত নই।
দেবব্রত দাস-কবি
জন্ম : ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫
মদন, নেত্রকোনা, বাংলাদেশ ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ :
আফিম ও ভালুকের নাচ (২০০৪)
ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের ভোজসভা (২০১০)
দশট্রাক মৌনতার ছবি (২০১৪)
বাবার অগ্রন্থিত দুঃখ (২০১৮)
দৃশ্যের বারকোড (২০১৯)
দণ্ডিত বৃক্ষের কলরোল (২০২০)
সম্পাদিত ছোটোকাগজ “সড়ক “।