রঙের আবিরে সেজেছে আঙিনা। দেয়াল আলপনায় ফুটে উঠেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও চিরায়ত রূপের নানা অনুসঙ্গ। শিল্পীর তুলির আচড়ে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন উপকরণ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশের বইপড়া আন্দোলনের প্রধান প্রতিষ্ঠান। আলোকিত মানুষ চাই এই স্লোগানে ১৯৭৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটি ৪৫ বছর অতিক্রম করেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর প্রতিষ্ঠা উৎসব পালন করে। তার ধারাবাহিকতায় আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পালন করবে ৪৫তম পূর্তি উৎসব। এদিন সারাদিন ব্যাপী নানান আয়োজনের মধ্যে আছে- বর্ণাঢ্য র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আড্ডা ইত্যাদি। র্যালিতে প্রায় ১০০০জন অংশ নিবেন, যেখানে গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, মানুষের জীবনযাত্রা, উৎসব, আনন্দসহ বহু বিচিত্র বিষয় উঠে আসবে। এছাড়াও উৎসব উপলক্ষ্যে প্রকাশ হচ্ছে একটি বিশেষ স্মরণিকা।
প্রায় দুইমাস ধরে আয়োজনের প্রস্তুতি বিষয়ে কাজ করছে উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। প্রায় ৪০০ জন স্বেচ্ছাসেবক উৎসব আয়োজনে দায়িত্ব পালন করছে। সাজসজ্জা ও বিভিন্ন উপকরণ তৈরি জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত কাজ করে। তাদেরই একজন চারুকলার শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক মির্জা আফসানা মিমি বলেন- ভালোলাগা থেকে কাজ করছি, আনন্দ নিয়ে কাজ করছি।
স্বেচ্ছাসেবকদের একজন দলনেতা মোহাম্মদ আলী মুর্তোজা বলেন,- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান আমার মতো লাখ লাখ তরুণদের বই পড়তে শিখিয়েছে। চিন্তার নতুনত্ব শিখিয়েছে একজন কার্যকর ও ঋদ্ধ মানুষ হতে শিখিয়েছে অনুসন্ধিৎসু হতে শিখিয়েছে তাই ৪৫ বছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই আয়োজনের কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যমান মনে করছি।
উৎসব উদযাপনের সাজসজ্জা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্মপরিচালক (প্রোগ্রাম), মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন আয়োজন সম্পর্কে বলেন,-পূর্তি উৎসবে প্রায় দশ হাজার মানুষের প্রীতি সমাবেশ ঘটবে। উৎযাপন কমিটি, কয়েকটি উপ-কমিটিতে ভাগ হয়ে প্রায় দুইমাস ধরে কাজ করছে। সরকারের বিভিন্ন সেবা সংস্থা, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের এ উৎসবে সহযোগিতা করছেন। সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আশাকরি, উৎসবটি ভালোভাবে সম্পন্ন হবে।
৯ ফেব্রুয়ারি আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ মানুষ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তন সদস্য ও বর্তমান সদস্যবৃন্দ এবং শুভানুধ্যায়ী। সাংস্কৃতিক আয়োজনে গান, নৃত্য, আবৃত্তি ইত্যাদিতে অংশ নিবেন বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীবৃন্দ।
মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়। হ্যাঁ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আলোকিত মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে। বইপড়ার মাধ্যমে সংস্কৃতিমান মানুষ তৈরির যে প্রচেষ্টা; সমাজ বদলের যে আন্দোলন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র করে যাচ্ছে, তা আরো দীর্ঘায়িত হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।