ক্ষুধার রাত্রি
আমি দেখেছি,
পিতার ব্যর্থ মুখের গম্ভীর চাহনি;
সন্তানের আহার্য যোগানোর ব্যর্থতায়
কাতর এক প্রাণ!
আমি দেখেছি,
মায়ের আঁচল তলে গোপন কান্নার জল।
বাঁধা সমাজের বন্দিনীর জীবন-যাপন।
আমি দেখেছি,
বড়দার নীরবতায় অবশ দুটি ঠোঁট;
অক্ষমতায় পাণ্ডুর মুখ।
আমি দেখেছি,
দিদির করুণ চোখের সুদূর চাহনি;
স্বপ্ন দেখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।
আমি দেখেছি,
বিচিত্র খাবারের উচ্ছিষ্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি আমারই আঙিনায়।
আমি দেখেছি,
ছোটনের দুধের আবদার,
সারাটি রাত্রি ভরে।
তারপর, ইতিহাসের এক করুণ মুহূর্ত—
একটি মৃত্যু ওকে ডাক দিয়ে নিয়ে যায়
স্বর্গের হোটেলে।
হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি দেখেছি,
আর ধিক্কার দিয়েছি তোমাদের এই সমাজকে!
এটা কি আমার অপরাধ হয়েছে?
ভালোবাসা ও বসন্ত দিনে
জীবনের ধারে ধারে ক্ষত ছিলো আজও আছে
নিত্যদিনের মতন ফেলে আসা অতীত
আজও বিবর্ণ আলোয় খেলা করে পুরোনো জানালায়।
সুখপাখি আজ আমার,
তাইতো দুঃখের সরণীতে সুখের রথযাত্রা।
সত্যিই প্রথম বসন্তের মতন মনে হয় জীবনের পর্বগুলো
মানুষের হাত ধরে আবার মানুষ হতে ইচ্ছে করে।
ইচ্ছে করে ফিরে যেতে ছেলেবেলায়;
বাবার হাত ধরে মেলা দেখতে যাওয়া;
অথবা মায়ের হাত ধরে সিনেমায়।
আট পয়সায় লাঠি লজেন্স খাবার তুমুল আনন্দ;
অথবা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া;
জগ ধরে কাঁচা দুধ গেলা রাস্তায়;
শেষে মাপতে গিয়ে মায়ের আদালতে জবাবদিহিতা।
সেজদার সাথে দশ আনায় চড়কি খেলা আড়ং-এ;
তারপর হেরে যাবার ক্ষোভে তুমুল হাতাহাতি।
কয়েক টাকার খেলনা কিনতে গিয়ে ফিরে আসা;
স্বপ্নপূরণের স্বপ্ন দেখা অন্ধকার বিছানায়।
ইচ্ছে করে ফিরে পেতে সেই রাজনীতির ময়দান,
যেখানে বঙ্গবীরের হাতে ছুঁড়ে মারা লাভ-ক্যান্ডি চুষতে চুষতে বাড়ি ফেরা;
অথবা স্বৈরাচারের প্লেন-ল্যান্ডিং দেখতে গিয়ে
ভগ্নিপতির বকা-খাওয়া;
অথবা নীহাদের রাজ-দ্বারে দাঁড়িয়ে বিচার দেখা,
এক বোধহীন বধূকে চুল কেটে দেয়া;
তারপর সমাজ-সংসার হতে তার পদত্যাগ।
এরপর একদিন বাবার চোখে ছানি পড়লো
সেই সাথে সংসারের চোখে এল ঘন অন্ধকার;
আর আমার ইচ্ছেগুলোও ডানা হারালো।
আজও ইচ্ছে করে ফিরে পেতে নীহার হাতখানি,
ছেলেবেলায় যে হাত বুকের উপর এঁকেছিল শপথের পাঞ্জা;
আজও বহাল তবিয়ৎ সে চিহ্ন।
যে হাত দিয়েছিল বড় হবার প্রেরণা
দিয়েছিল পুতুল পুতুল-ভালোবাসা।
আজও সে পুতুল ঘুমিয়ে আছে ভালোবাসার বেডরুমে।
শুনেছি, এখন নীহার বুকে গণকবর
সংসারের বোঝা কাঁধে;
শুনেছি ও কাঁদে, একজন নারী যেভাবে কাঁদে।
আজ এ ভালোবাসার দিনে
ইচ্ছে করে একমুঠো খাঁটি ভালোবাসা খেতে;
ভেজালের সমারোহে কোথা পাই, বলো তো?
ফিরে ফিরে আমি তাই,
একজন অমানুষ যেভাবে একজন মানুষের কাছে আসে;
একটা সারমেয় যেভাবে একজন মনিবের কাছে আসে;
একজন ভিখারি যেভাবে দ্বারে দ্বারে ঘুরে;
আমিও ঘুরি যেভাবে পৃথিবী ঘুরে
তবু ফিরে যাই তোমরা ফেরাও বলে।
সোহেল রানা-কবি।