আয়নাখেলা –৫
কী করছো?
-আপন মনে হাসছি। যেমন হাসে তাসের জোকার।
-কেন?
-নেই কারণ। নয় অকারণেও। ভাবছি মানুষ তার পিতার কবরেও ফুলগাছ রোপণ করে। রমণের পরেও হাহাকারে নুয়ে পরে প্রমত্ত নিষাদ।
-হ্যাঁ তা ঠিক। বিষাদ জাতকের নেই ঘুমের বিলাস। যাতনা মন্ত্রে নেই ধ্বনি। তাই বলে হাসছো তুমি? ঝড়ে তৈরি দেয়াল ঘেরা ঘর না বনবাস? অশেষ বীণা ও বাণ।
-কৃষ্ণপক্ষ ঘোর, তাই হাসি ঘরে তুলে রাখি। অসময়ে যদি আসে নদী, খুলে দিতে হবে তাকে নিজের উঠোন, আসবাব, রূপার পালঙ্কখানি।
-সে পালঙ্ক কোথায় তোমার? রাজা রানি মিশে যায় তুমি যাও পাতার সোহাগে, বোবা এক দুয়োরানি!
-জানি তা। না পালঙ্ক না পাতা। আমার দশদিক শুধুই শূন্যতা। তবু জানো, যেকটা দিন চোখ আছে দেখে যাবো, সতীন চাঁদের দিকে কানাইয়ের খুব চেয়ে থাকা। সে কত বুকের কাছে, আমি চরাচরে একমাত্র একা।
-তবু হাসি?
-হতে পারে। বুকের পাড়াটিতে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে চাষবাস করি কিছু গোপন আকুলতা। সেই থেকে কিছু স্বর যদি কোনদিন হয়, এইটুকু আশা।
-থাকো। হলো অন্ধকার।এবার যেতে হয়।
-আছি। আমাকে থাকতেই হয়।
চাঁদকাহন
মুখটা আঁকা ছিল।কতক বিবর্ণ কতক মেঘমালা হয়ে। খুলেছে ধানের কৈশোর, এখন গায়ে সোনা রং এর শাড়ি। ধানের সংসার হয়, ছেলেপুলেও হয়। শুধু ধান হয় না নায়রী। বরং চাঁদই সংসারে আনো! বলেছিল কলাবউ, ভীষণ অভিমান তার। তারপর আমি আর তাকে খুঁজে কোথাও পাইনি। না কৃষ্ণপক্ষ না শুক্লপক্ষে।
গৃহজুড়ে সাতশ বছর প্রদীপ জ্বলেনি। গায়ে রৌদ্র মেখে শিশুটিও হাসেনি আলো হাসি। অথচ চাঁদ তেমনই নির্লজ্জ মোহমায়ায় অবশ করে রেখে যায় পূর্ণিমা এলে। আমি ঠায় বসে থাকি জানালায় যেন ডাহুক হয়ে।যেন কোন জগৎ নেই, নেই শূন্য, জোছনা পেরোলে। আমি গাঙ বাই, সোনাবউ, কোলে কালো শিশু …ছলকে ছলকে ওঠে জোছনা ভেজা রাত্রিজল। ও চাঁদ, অভিমান বোঝেনা কেন এই পিপাস অতল!
বৃক্ষপুরাণ
ঝরে যাচ্ছো ময়ূর। জানালায় জেগে আছে রাজগোখরো। আমার এ ঘরে জলের নিবাস ছিল, এখন শ্মশান। মৃতদেহে তুমি আর কতটা নীল ঝরাতে পারো? আকাশ যখন লাল চুনী পরে ছিল অনামিকায়, তখনই আমার অনুরাগ পুড়ে গেল। শূন্যে ছাইরঙা মেঘ, জীবন ঝড়ের উপরে দুই ডানা মেলে। নয়ন বাজপাখি হয় একসময়। জলতরঙ্গ বাজে। শূন্য থেকে শুরু হয় আশ্চর্য শিমুল ফুল। নীলে যোগ হয় শুভ্র তন্ময়। আরম্ভ করতে হলে শেষ করতেই হয়। জগৎ এক অবিরাম চমক মেলা। দিনরাত এক দারুণ জোকার চকমকি পাথর ঘষে পায়রা বানায়। আগুনে ঝাঁপ দিয়ে অন্ধকারগুলি আলো বানানোর ম্যাজিক দেখায়। এবং নাগরদোলা …… যেখানে উঠলেই তুমি দেখতে পাবে নীচে শূন্যের কারিগর তৈরি করছে কোটি আলোকবর্ষ দিয়ে সময়ের তারা। যখনই থামবে নাগরদোলা নিমেষেই অদৃশ্য সব
শেষ দৃশ্যে অভিনয় করেছিল যারা।