চলো হায়েনা হয়ে যাই
আমার বন্ধুর এক কান দিয়ে একটা ছুরি ঢুকে
অন্য কান দিয়ে বের হয়ে গেছে।
সেই অবস্থাতেই সে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে।
ওর যন্ত্রণা আমি বুঝতে পারি, কারণ
এক সময় আমারও কানের মধ্যে ছুরি গেঁথে গিছিলো।
রাস্তায় একটা বাচ্চা ছেলের মাথার উপরের অংশটা
কে যেন কেটে নিয়ে গেছে;
এখন তার মাথাটা একটা পাত্রের মতো দেখতে
আর সেই পাত্র বাড়িয়ে ধরে সে
ভিক্ষার পয়সা কুড়াচ্ছে।
বাচ্চা ছেলেটার কষ্ট আমার বন্ধু বুঝতে পারে।
কারণ ছোটবেলায় ওর মাথার উপরের দিকটাও
কেউ একজন নাকি কেটে ফেলেছিল।
পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা জরায়ু চেপে ধরে
এক মহিলা বাসে মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করছে।
তার নাকি প্রসবের সময় পেটের মধ্যে
শিশুর বদলে একটা জ্বলজ্যান্ত কঙ্কালকে
শুয়ে থাকতে দেখে ডাক্তার আর সেলাই করার সাহস পায় নি।
এই মহিলার দুঃখ যাত্রীসিটে বসা
উস্কোখুস্কো একটা মেয়ে অনুভব করতে পারে। কারণ,
তার মায়েরও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, সে যখন অনেক পিচ্চি।
একটা শুকনো সবুজহীন গাছে শকুন বসে বসে পালক খুটছে।
বারান্দায় ইজিচেয়ারে সূর্যটাকে ফুটবলের মতো কোলে নিয়ে
রিটায়ার্ড আঙ্কেল মৃতপ্রায় গাছটার আত্মায় ঢুকে যায়।
কেননা, তারও যে প্যারালাইসিস!
তিসি ক্ষেতে কাজ করার সময় ক্রসফায়ারে অকালমৃত্যু
হয়েছে কৃষকের ছেলের। কৃষকের বেদনা পাশের গ্রামের
মাঝি বুঝতে পারে। কারণ, তার মেয়ে
গার্মেন্টসে আন্দোলন করতে গিয়ে অপহৃত হয়ে নিখোঁজ আছে।
রক্তশূন্যতায় বিবর্ণ এক কিশোরী
চাঁদের বেহুঁশ আভায় ঘাটে এলো পানি নিতে।
কিশোরীটার অপুষ্ট দেহের দুর্বলতা নদী জানে। কারণ,
তারও জল শুকিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।
অন্ধকারে থোকা থোকা কালো জামের বেগুনি মধুতে
চুমুক দিতে এসে জালে আটকা পড়লো বাদুড়ের ঝাঁক।
তাদের অসহায়তা উপলব্ধি করতে পারে
কারাগারে বিনা বিচারে পঁচতে থাকা কিছু লোক।
এখানে সবাই সবকিছু জানে
অভিজ্ঞতার দহনে।
এখানে আলাদা, ব্যতিক্রম বলে কিছু নাই।
তোমার আমার জীবন একই কক্ষের পরিচিত আবর্তন।
আমাদের অবমাননা, অস্বস্তি, বিলাপের অসুখও একটাই।
তাই চলো একসাথে অসুখটার ওপর অতর্কিতে
ক্ষুধার্ত, বিকৃত হায়েনার মতোন ঝাঁপিয়ে পড়ি…
আমি এখনো জন্মাইনি
যা কিছু ঘটে যায় রৌদ্র সীমানায়
তা যেন অন্য কারো জীবন,
অন্য কেউ দিনলিপি লিখছে কষ্টের পৃষ্ঠায়।
পদ্ম পাতায় আকাশ গলে জল
পড়ছে পড়ছে, ভাবলেশহীন
পিছিয়ে কিংবা এগিয়ে যাই প্রতিদিন, ভ্রুক্ষেপহীন–
তোমার আমার পার্থক্য ঠিক কতোটুকু? তুমি কি সব সময় সঠিক?
আমার একাকিত্ব তোমার ভুবনসেরা উপহার।
প্রকারান্তরে তুমিও পেঁচিয়ে যাও সিসিফাসের ফাঁদে।
নাগরিক জ্বালার জানালায় দৃশ্য কাঁদে,
পার হয় ফাঁকিবাজ মহাকাল
আমাকে স্থির সেতু করে তার পায়ের তলে।
এখানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা: নিজেকে হত্যা!!!
কিন্তু তা নয় আত্মহত্যার মতো রঙিন মিথ্যা।
অন্যের চোখের দূরবীনে আমি নেই
আমার চোখে নেই অন্য
শুধু পণ্য মাতলামি করে আর আমি সে
পণ্য গড়ার নগণ্য হাতিয়ার।
যা কিছু ঘটে যায় নির্বাক নির্মমতায়
তা হলো রূপহীন এক রূপকথা,
অন্য কারো ডানার শিকল আমাকে ছুঁয়ে দেয়।
এখানে শিশুরা খেলে ভয়াবহ অস্ত্র নিয়ে,
আগুন শিশুদের প্রিয় রং।
সবুজ দ্বীপপুঞ্জ পুড়ে গেছে মরুভুমির লেহনে,
শুধু কিছুটা ফিকে সবুজ আছে পেছনে
স্মৃতির দেয়ালে শ্যাওলা হয়ে।
যা কিছু ঘটে যায় ঘটনা পরম্পরায়
তা ভীষণ অচেনা অচেনা লাগে,
অন্য কারো জীবনের বোঝা চাপানো আমার মাথায়।
পৃথিবী এখনও একটা চারাগাছের ভবিষ্যত ফল;
আর আমি হই সেই ফলের পরিণতি সন্ধানী
দুরারোগ্য, প্রেমিক পোকা।
আমি এখনো জন্মাই নি।
আমি এখনো জন্মাই নি।
ডাকছে তোমাকে আর আমাকে
ওপেন এয়ার কনসার্টে।
আমি সেই রোদকেই ভালবাসি
বেঁচে থাকা একটা সাদাকালো খাঁচায়
বন্দী রঙিন বাঘ। আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম
সেই বাঘের খাঁচায় এক চিলতে
রোদের অনুভূতি।
পণ্যের ঝড় তুফান বয়ে গেলে
রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখি উজ্জ্বল মোড়কের ঢিবি।
তোমায় খুঁজে না পেয়ে নির্বাক ঐ নীলে
তোমার রঙে আঁকি বিকল্প পৃথিবী।
আমাকে ঘিরে রেখেছে অচেনা বিশালতা।
সব বিশালতায় থাকে মরুভূমির ধূ ধূ চেহারা।
ছোট হতে হতে হারিয়ে যাওয়া
বসতঘরের পাশে অপরিচয়ের বোঝা নিয়ে
বেড়ে চলছে ফেনিল অনন্ত।
লাশ কাটা ঘরে অভ্যস্ত নৈঃশব্দ্যের ভিতরে
একটা টিকটিকি ডেকে ওঠে।
কেউ সাড়া দেবে না জানি
এতো মৃত্যু হয়ে গেলে।
কিছু অন্ধ লোক সাঁকোর ওপর বসে থাকে
মৃত্যুর ডানা মেলে।
সূর্য অস্ত যায় না, রাত গভীর হলেও।
সূর্যের দিকে তাকিয়ে চোখে জল এসে গেলে
হাত দিয়ে চোখ ঢাকি।
তবু সূর্যের দাপটই সত্যি।
দূরে কোথাও পাহাড়ের আড়ালে
কুয়াশার মতো জড়ো হয়ে নামছে বৃষ্টি।
দূরে থাকা বৃষ্টির গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি।
একদিন মারা যাবো, ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
নিজেকে ভালবাসি বলে আয়নাটা সঙ্গে রাখি।
আয়না ভেঙে গেলে অনেক কষ্ট পাই,
অবশেষে বুঝি, আমি তো অক্ষত আছি!
নির্ভরতার বিপদ পেরিয়ে
জেনো এখনও বেঁচে আছি।
বেঁচে থাকা একটা সাদাকালো খাঁচায়
বন্দী রঙিন বাঘ। আর বেঁচে থাকার সংগ্রাম
সেই বাঘের খাঁচায় এক চিলতে
রোদের অনুভূতি।
আমি সেই রোদকেই ভালবাসি।