বর্ষতী কদমের বসন্ত বিলাপ
জানি, আলোমতি – তোমার দুধে আলতা
মাখাতে শিখেছ তুমি । তোমার শরীর নির্গত ঘামে মিশিয়ে রাখো―
রসালো সব টক তেঁতুল আর, ঝিঁঝিঁ পোকাদের বিচিত্র
আবেদন মুখরতা। তোমার তীব্র আলোর ঝলকানিতে
রঘুপতিরাও ছিটকে পরেন ভুল পথে।
পথের মোড়ের নেরী কুকুরের কান্নাও
তোমার কাছে নিরেট ঘেউ ঘেউ।
তুমি তো ব্যস্ত তোমার পোষা বিড়ালের
পায়ে ঘুঙুর পড়াতে। রঙ মাখা বিড়ালের
ঝুঁমুর নৃত্য দেখেই তোমার সময় কেটে যায় বেশ।
জানিতো, সব জানি।
এবং এও জানি―
সাজানো তোমার রক্ত জবার বাগানে যে প্রজাপতি
প্রতঃকর্মে মত্ত¡; দিন শেষে সেও পাখা গুটিয়ে
লুটাবে তোমারই পায়ের তলায়। অথচ,
কেবল তুমিই জানো না…
তোমার গোরখোদক ঐ ডাক বাক্সে প্রতিদিন
কতগুলো নক্ষত্র রঞ্জিত আকাশ জমা হয়।
নদী ও নিজস্ব ব্যাঞ্জনা– (সাত)
ওগো নদী,
তুমি ভদ্রাবতী হও
আমি ভগীরথী সকাল হব।
উত্তাল আমার শিশ্ন স্নানে
নিভে যাক তোমার আঁচলে লুকানো মাভৈ আগুন।
নদী তুমি পূর্ণবতী হও-
মঙ্গলময় তোমার জলধারায়
পূর্ণ হোক আমাদের কামনা বিলাস।
তুমি চাইলেই আমি-
গৌতমবৃক্ষ হতে পারি
জলযাতনার বিরহ যাপন
হ্যাঙ্গারে ঝুলানো সোনারোদও ফিকে হয়
আলচ্য মেঘের ঝড়ে
কোন এক অপঘাতে মৃত বিকেলের গল্প ফিরে আসে
এ শহর ঘুমালে― রাতের তুমুল অন্ধকারে।
এরচে বরং সেই ভালো―
চলুন, কাছিম দৌড়ের অভ্যাস গড়ে তুলি
যেভাবে, স্বপ্নবাজির তুখোর আড্ডায়
পা দু’টোকে রেখে আসি আরশির ওপারে
যেন, মরণের চিহ্ন না ফোটে এই চরণে।
মায়াবৃক্ষ
তখন, বোধের বারান্দাজুড়ে প্রচণ্ড শীতকাল।
মানুষের মগজে থরথর কাঁপুনি। বন্ধ সমস্ত চাষাবাদ।
যুদ্ধের নগরীতে জন্মেছিলো যে মায়াবৃক্ষ
বেড়ে উঠছিলো তরতড়িয়ে পরিচর্চার তোয়াক্কা ছাড়াই
তাকে আমলে রাখেনি কেউ।
মরুর নগরীতে সবুজের বিপ্লব সমাবেত হলে
মায়াবৃক্ষের ছায়ায় প্লাবিত হয় সমস্ত দেশ;
প্রজ্ঞা ও প্রেমের সুউচ্চত্বর ফলন হলে
দেশের মানুষ প্রেমফল খেয়ে ধরণ করলো জীবনের জীবিকা।
আহা প্রেম!
মায়াবৃক্ষের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা একদল অনিষ্ঠের ছাগল
তাঁর প্রেম নিয়ে খেলা করলো। পাতা ছিড়লো, ডাল ভাংলো
শিকড় সমেত উপরে ফেললো শেষে!
সমস্ত দেশ হলো প্রেমহীন, ছায়াহীন, মায়াহীন।
মায়াবৃক্ষ এবার সময় সাধনা করলো;
তারপর,
গাছটির গোপনীয় জীবনে
প্রবাহিত হলো শতেক সূর্যের দ্যুতি।
অচমভীতি
সমগোত্রিয় পাড়াতে আড্ডায় একদিন এক নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্তে আমরা একমত হলাম। স্কীপ্ট, পূর্বই নির্ধারিত। চরিত্র নির্বাচন শেষে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য মননিত করা হলো আমাকে । নায়কের চরিত্রটি পেয়ে আমিও যারপর নাই― আনন্দিত, অহল্লাদিত!
অতপর, ঋতু-ঋতু রিহার্সেল শুরু হলো আমাদের এই নাটকীয় নগরীতে। মহোরা চললো দীর্ঘ দিন। প্রাঞ্জল দৃশ্যায়নের জন্য রিহার্সেলের দীর্ঘ দশ মাস পর এলো সেই মহেন্দ্র ক্ষণ― ফাইনালী মঞ্চায়নের দিনে― চরম উদ্দ্যম ও উচ্ছাসের মধ্য দিয়ে আমি মঞ্চে উপস্থিত হলাম। দেখলাম পৃথিবীময় দর্শক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। দেখছেন আমার মেক-আপ, সেট-আপ, গেট-আপ। আমি তখনও ডায়ালগ বলিনি। তাতেই সকলের মুগ্ধতার চোখ দেখে অনুমান করে নিলাম …
কিছু সময় পর, ‘মা বলতেই সকলে হাততালি দিলো। বললো, বাহ! বাহ! …এভাবে আমি যতো ডায়ালগ বলি, লোকজন ততো হাততালি দেয়। হাততালি দেখে আমার ভেতরে উদ্দেলিত হয়। মঞ্চের পেছনের নির্দেশকগণ মহা-আনন্দিত হন। উৎসাহে, আবেগে উদ্ভাসিত হই আমি।
আনন্দের বন্যায় ভাসতে-ভাসতে এক সময় আমার মন থেকে স্কীপ্ট হারিয়ে ফেলি। নিজের চরিত্র ভুলে চরম অবস্থান সংকটে পড়ে যাই। সংকটাপূর্ণ আমি পেশাকের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে চাই―সমস্ত পৃথিবীর লোকজনের হাসিরপাত্র হবার আগেই।
প্রাণপণ চেষ্টায় মুখসের আড়ালে মুখ ঢাকতে পারলেও দাঁত ঢাকতে পারি না। যেমন, দাঁতের ফাঁক গলে বেড়িয়ে আসা লালসার জিহ্বা ঠেকাতে পারি না কিছুতেই!