জরায়ুর উনুন কিংবা হেমলকে দর্শনপিতা
তোমার রোজনামচা রোজ পড়ি। ডায়েরি থেকে খসে পড়ে শব্দ। আসি আর যাই। সেই থেকে নোটবুক কাঁদছে। ব্যথাতুর চক্ষুযুগল গলিত পারদঘর ছোঁয়ার নেশায় অবিরত কাঁপছে। আঙিনায় ছড়িয়ে আছে আম্রপালি। চলো নির্জনে, উঠবে ডাক। জলে হয়তো আগুন। শস্যদেবী টসটসে মাকালু। ঝোলা ভরেছে পরিত্যক্ত চুম্বনে। কামে অনন্ত শব্দের সম্ভাবনা। গোধূলিতে কাঁপছে প্রাতরাশের জনপদ।
ব্যক্তিগত স্তরে ভাঙছে অনৈর্ব্যক্তিক কলাবিদ্যা। শব্দগুলো এখনো অসংলগ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অবিনশ্বর বিদ্যানিকেতনে। তোমার শব্দগুলো অবিরাম খেলা করছে কানের কোটরে। চিৎকারগুলো ডালপালা গজিয়ে এখন ডালপুরি। মোহন শীৎকারগুলো নদীর ভ্রূণফুল। তোমার বাড়িতে ভাসিয়ে দিয়েছি বেহুলা-লখিন্দরের অনিশ্চিত ভেলা।
জল ছুঁয়েছে জলের মোকাম। মোহনায়-মোহনায় জলবিন্দুর জলবিম্ব ছায়া। জলমন্দিরে ন্যাংটো ইঁদুরের জলখেলা। তুমি চিৎ হলেই চাঁদের কলঙ্ক মুছে যায়—গুনগুন করে স্লেটে লেখা অক্ষর। বালিতে আঁকা-আঁকা অস্পষ্ট চিত্র ককিয়ে ওঠে—যেনো তোমার অমীমাংসিত জাদুকরী প্রেম। সূচিপত্রহীন অপলক দৃষ্টি আর অপুষ্ট চুমুগুলো হামাগুড়ি দিচ্ছে গন্তব্যহীন সৈকতজুড়ে।
জলের নিথরে জলের কারুকাজ। দেহে-দেহে এখনো জেগে থাকে ইংলিশ গ্রামার। ও আমার চিতাবাঘিনী- তুমি আজ চিতাবাড়ি দুঃখ আর তিতাবাড়ি গুমোটঝড়। বুকে পাথরের টনটন ধ্বনি। ও বালিকা বিজনে শোনো- মড়মড় করে ভেঙে যাওয়া ব্রিজের শঙ্খধ্বনি। হেমলকে ঘুমিয়ে আছে দর্শনপিতা। পলাশ ফোটানো দিনে জরায়ুর উনুনে পোড়ে আমার অনাগত শিশুদল। আজো অসংঘবদ্ধ বাতাসে বাজে পৃথিবীর সবচেয়ে নীল অপরাজিতার নাম-সুপ্তা বিশ্বাস কিংবা নীলিমা বোস।
কবিতা মৃত্যুক্ষুধা–প্রেমের বাগান
অনেকদিন পর… অনেক-অনেক-অনেক প্রহর নাচিয়ে… অনেককাল পর এমনই চেয়েছি; যেনো রবিবাবুর মাথা ছাড়িয়ে জীবনবাবুর পাশ ঘেঁষে উঠে যাক মহাকালের কাল-কালান্তরে। ঠিক আমি যেমন ভাবছি কিংবা কবিতা যেমন আমাকে ভাবছে। কবিতারা কতো-যে ভাবনায় খেলা করে দ্রাঘিমান্তর ছাড়িয়ে…
কবিতা শাদা-কালো, কালো-শাদা, ফর্সা-তামাটে, নীলবর্ণ লাল তামাশা; কবিতা মায়াঘোড়া আয়নাবিবির হাসি নাকি জ্যোৎস্নাপ্লাবিত পাখি! ডুবে-থাকা জাহাজের ডেকে গোয়েন্দাদের বৈঠক নাকি দৌড়ে যাওয়া ডেভিড কপারফিল্ডের প্রাতঃভোজ উদ্যান নাকি ধারাবাহিক জীবননাট্য নাকি ভিসেন্তির জীবনবোধ অথবা বোর্হেসের কবিতার বাগান কিংবা অ্যালেন গিন্সবার্গের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার! অনেকদিন পর পাতায়-পাতায় রঙিন ক্লোরোফিল সবুজ ক্লোরোপ্লাস্ট; Johnson’s milk-baby-এর পর- Almond & Olive Oil Himalaya baby lotion with nourished and moisturized softy-smooth-beauty- গলে-গলে পড়ছে সোনারঙ পাথরগুহায়। মাঝে-মাঝে বদলে যায় চোখের রঙ; আমার কবিতার বাগান হয়ে যায় স্বপ্নের পাহাড়চূড়ায় ডলার-ডলার পদ্মাব্রিজ। রূপান্তরবিদ্যায় কালো-কালো হাতির বদলে মায়াদেবীর ডাগরআঁখি জাদু; প্রেমের নৈবেদ্যে সাজানো সুনিপুণা রূপসীর মুক্তোঝরানো রূপকথার ডোরাকাটা গালিচা। উপরিতলায় আঁকাআঁকি ঢেউয়ানো মাদুর নিচুতলায় বয়ে যাওয়া পরিযায়ী মাছের কাঁটাকাঁটা উল্লাস আর ফোকলা দাঁতের ঝিলিক-ঝিলিক কুয়োহাসি বেদনার নাগরপুরে। কালো-কালো দেশ থেকে দেশে; শাদা-শাদা সমুদ্র থেকে সমুদ্রে; সবুজ মহাদেশ থেকে বিবর্ণমুখ মহাদেশে; রক্তাক্ত রাজনীতি থেকে সাজানো ইতিহাসে; প্রাসাদকামরা থেকে জনারণ্য বস্তি উৎসব অন্ধকার গলিপথে; সাবমেরিন থেকে যুদ্ধবিমানের পাখায়-পাখায় চিৎকার করে যাচ্ছে কবিতার জননী। বহুদিন বহুযুগ পরে কালের কপালে কবিতার হরেকরকম ডাইমেনশনে থোকা-থোকা ভ্যাকসিন খেলা।
বহুগামী পারিজাত পাখির মতো রঙরাখালের বাঁশির কোটরে ফুটাই বহুব্রীহি বর্ণিল সুরবাসনা। কবিতাপাখি হয়ে উড়ে-উড়ে বসি ফুলে-ফুলে; মধুকরের মতো জিহ্বা ঢুকিয়ে আবিষ্কার করি মধুরাক্ষী রসময় গুপ্তচর। আমি মিশে থাকি বৃক্ষদেবীর চর্মবাকলে; আদিঅন্তে মাটির সেতারে কবিতার লিরিকে বাজিয়ে যাই মৃত্যুক্ষুধা-প্রেমের গান।