২২ মার্চ ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় রহমান রাজু রচিত নাটক ‘বঙ্গ পুরাণ’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের সকল জেলায় নাটক মঞ্চায়নের অংশ হিসেবে এ মঞ্চায়ন। নির্দেশনায় ছিলেন শাহাদাত হোসেন খান হীলু। ময়মনসিংহের বিভিন্ন নাট্য দলের সদস্যরা নাটকটিতে অভিনয় করেন।
‘বঙ্গ পুরাণ’ নাটকে মূলত বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলার অতি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার লড়াই সংগ্রামের যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। কিছু কবিতা ও কথামালার মাধ্যমে আমাদের সুদীর্ঘ ইতিহাসকে স্বল্পসময়ে তুলে ধরার একটি প্রয়াস নাট্যকার রহমান রাজু’র; যেটিকে নাট্যালেখ্য বলাই সমীচিন বোধ করি।
বঙ্গ পুরাণ-কে বাঙলার স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিলও বলা যেতে পারে। ঊনিশত সাতান্ন-এ পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার অস্তমিত সূর্যকে আমরা হেলায় হারিয়েছি নাকি কতিপয় বিশ্বাসঘাতকের ঘৃণ্য চক্রান্তে বাংলাকে ভিনদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে আমরা শোষিত হয়েছিলাম তা ইতিহাসে প্রমাণিত। মীরজাফর সিরাজ-উদ্দৌলা’কে হত্যা করে নিজের নামকে স্থায়ীভাবে ‘ঘৃণ্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং বিদেশী ইংরেজ কোম্পানীর হাতে বাংলাকে তুলে দিয়েছিলেন। ইংরেজরা ক্রমান্বয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি অত্যাচার ও শোষণের মাত্রা বাড়াতে থাকে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অত্যাচার থেকে মুক্তির চেষ্টায় দীর্ঘ আন্দোলন আর বিদ্রোহের ভেতর দিয়ে যুগে যুগে এই বাংলায় বিপ্লবী নায়কের আবির্ভাব ঘটেছে।মাস্টার দা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ক্ষুদিরাম বসু উল্লেখযোগ্য। ‘বঙ্গ পুরাণ’ নাটকে নাট্যকার উপস্থাপন করেছেন প্রিয় স্বদেশকে মুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করে নিজের নামকে কীভাবে স্বর্ণাক্ষরে লিখেয়েছেন। ঊনিশত সাতচল্লিশ-এ ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে যায় এবং দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে স্বাধীন দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।কিন্তু বাঙালির কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্ন আবারো পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর হাতে লুন্ঠিত হয়।আঘাত করা হয় মাতৃভাষার উপর; উর্দুকেই একমাত্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা আসায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ব বাংলা। দীর্ঘ অবহেলা, বঞ্চনা আর পরাধীনতার শৃংখল থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে উঠে বাঙালি। তখন বাঙলায় আবির্ভাব হয় এক মহানায়কের, যিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন মুক্তির-স্বাধীনতার। বাংলাকে স্বাধীন করতে বিশাল জনসমুদ্রে উচ্চারণ করলেন- “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
বাংলা ও বাঙালির সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটসমূহ খন্ড খন্ড করে তুলে ধরা হয়েছে ‘বঙ্গ পুরাণ’ নাটকে।
এটিকে মঞ্চে সৃজনশীল ভাবনা দিয়ে দর্শক সম্মুখে যিনি উপভোগ্য করে তোলার নেপথ্যে নিপুনতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি হলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য-ময়মনসিংহ থিয়েটার এসোসিয়েশন এর আহ্বায়ক ও সচিব বহুরূপী নাট্য সংস্থা ময়মনসিহের সচিব শাহাদাত হোসেন খান হীলু। ‘বঙ্গ পুরাণ’ নাটকে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য এই কারণে যে, কেবল নির্দেশনার মাঝেই থেমে থাকেন নাই তিনি। নাটকটিকে মঞ্চ উপযোগী করে উপস্থাপন করতে তিনি নাটকটির পুনঃবিন্যাসও করেছেন।গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে একঝাঁক তরুণ শিল্পী নিয়ে নির্দেশক চেষ্টা করেছেন নাটকটির প্রাণবন্ত উপস্থাপনায়; তিনি সফলও হয়েছেন।