মাসের তিন তারিখ। সকাল দশটা। একটু আগেই কৌশলের বেতন হয়েছে। বড় চাকরীর ছোট বেতন। বেতন প্রতিবারেই এক মাস পরই হয় কিন্তু মাঝে মাঝে এই এক মাসটাই কৌশলের কাছে তিন মাসের মতো মনে হয়। বেতন হওয়ামাত্রই অনেকগুলো বিষয় দ্রুতগতির চলচ্চিত্রের মতো কৌশলের সামনে ভেসে ওঠে আবার মিলিয়ে যায়।
প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় কৌশল দেখে, পথের দুপাশে সাজানো মৌসুমী ফলের দোকান। সেগুলো দেখতে দেখতে কৌশল ভাবে, আগে বেতন হোক…। বাসার সামনেই একটা বিরিয়ানীর দোকান। আসা যাওয়ার পথে কাচ্চির সুবাসে(নাকি দুর্গন্ধে ?) পেটের ভেতর গুলিয়ে ওঠে সবকিছু। তবে সেটা পেট গুলায় নাকি পকেট, তা কখনো নিশ্চিত হতে পারেনি কৌশল। আজ বেতন হয়েছে, আজ এটার একটা সমাধান হবে.. ..। রাস্তার পাশে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বাচ্চাদের সাইকেলের দোকান সবাইকেই কৌশল মনে মনে বলে, বেতন হোক, বেতন হোক…। এমন আরো অনেক বিষয়, অনেক ঘটনা, অনেক ইচ্ছে চোখের সামনে ভেসে উঠেই আবার মিলিয়ে যায়।
আজ খুব দৌড় করতে হয়েছে অফিসে-অফিসিয়াল কাজে না, মানিব্যাগটার জন্য। অন্য দিনগুলোতে আর যা-ই হোক, বেতনের দিন মানিব্যাগটা কোনোভাবেই কৌশলকে তার ফ্লোরে বসে থাকতে দেয় না। তাই বাধ্য হয়েই পাশের ব্যাংক, অফিসের এ ফ্লোর, সে ফ্লোর সব জায়গায় মানিব্যাগটা দেখাতে হয়েছে। কারণ, এসব জায়গায়ও কথা দেয়া ছিলো, বেতন হোক।
বিকেল পাঁচটা। অফিস থেকে বের হতে হবে। হঠাৎ মানিব্যাগটা হালকা লাগলো কৌশলের কাছে। চমকে উঠে খুললো সেটা। চোখ দুটোকে মানিব্যাগের ভেতর সেঁধিয়ে দিয়ে খুঁজে খুঁজে দুটো ১০০ টাকা আর একটা ৫০০ টাকার নোট বের হলো। টাকা কোথায় গেলো? কাগজ কলম নিয়ে হিসাব করতে বসলো কৌশল। না ঠিকই আছে সব। হাসি পেলো হঠাৎ। এ হিসাবটা সে প্রতি মাসেই করে আর এমনি করে হাসে। এমন সময় অনেক দিন আগে শোনা একটা চুটকী মনে পড়ে তার: “একজন প্রশ্ন করছে পিরিয়ড আর নিম্ন-মধ্যবিত্তের বেতনের মাঝে মিল কোথায়? কেউ জবাব না দেয়ায় প্রশ্নকর্তা নিজেই তার উত্তর দেয়-নিয়মিত হোক বা অনিয়মিত, দুটোই শুরু হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে শেষ হয়।” কী নির্মম সত্য কথা!
যা শেষ হওয়ার তা তো শেষ হবেই। সেটা নিয়ে আর হা-হুতাশ করে লাভ কী? মনের মধ্যে যা-ই থাক, ঠোঁটের কোণে ট্রেডমার্ক হাসিটা ঝুলিয়ে, অফিস থেকে বের হয়ে, কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে কৌশল। বাসায় ঢোকার মুখেই আবার সেই বিরিয়ানীর গন্ধ। থমকে দাঁড়িয়ে দোকানটার সাইনবোর্ড পড়ে কৌশল, তারপর মুচকি হেসে গত মাসের মতো এবারও সুদৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হয়-কাচ্চির গন্ধে সত্যিই তার গা গুলায়!
দেলোয়ার হোসেন ডালিম
অণুগল্প হিসেবে ভালোই লাগলো।