জলজীবন
বিষন্ন দিন যখন শেষ হয়ে আসে
আমি মিশে যাই গুনটানা নাওয়ের দলে,
কতো নিশিদিন তারা কাটিয়েছে নদীর পার ঘেঁষে
হেঁটে গেয়ে বিরহী সুর।
কতোদিন হয় না দেখা প্রেয়সীর মুখ
কতোদিন হয় না শোনা স্বজনের ডাক-
বিরহী নাইয়া — আর কতোকাল টানবে
নাওয়ের দাঁড় — উজানের স্রোতে!
লেটার প্রেস
দু’খানা মুদি দোকান-
তারপর মোহনবাবুর সেলুন পেরোলেই পুরনো লেটার প্রেস
টেবিলের উপরে খোপকাটা প্রকোষ্ঠে রাখা সারি সারি উল্টো অক্ষর।
প্রতিদিন প্রুফ নিতে আসা মফস্বল সাংবাদিক
নির্বাচনী পোস্টার নিতে আসা তরুণ নেতা-
কথায় কথায় মুখরিত টিনশেডের এই চিলেকোঠা।
লেটার প্রেসের কম্পোজিটর মালেক জমাদ্দার
আমার খুব মনে পড়ে মোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা
ছিপছিপে গড়নের সেই মানুষটির কথা।
প্রেসের খটখট শব্দে যেন জীবনের স্পন্দন-
মিহিন এক সংগীত হয়ে বাজে প্রেসের চাকায়
বুলিয়ে দেওয়া ব্রাশের কালিতে পরতে পরতে।
প্রেসের গড়গড় শব্দে মিলিয়ে যায় অনবরত
জীবনের কতশত বর্ণমালা খোদাই অক্ষরে
সকাল থেকে মধ্যরাত- কিংবা মধ্যরাত থেকে সকাল।
আমার কৈশোরের প্রিয় নেত্রকোণা-
তারুণ্যের কতশত স্মৃতি দাপাদাপি করে লেটার প্রেসের ‘উত্তর আকাশ’-এ
নিউজ প্রিন্টে ছাপা সাদাকালো ‘দ্বিতীয় চিন্তা’য়
শব্দের নিখুঁত বুননে খসখসে কাগজের ‘গ্রাম পাঠাগার জার্নাল’।
স্মতিঘেরা এই কুটির জুড়ে লেগে থাকে কতো অমলিন স্মৃতি
লেটার প্রেসের খট-খটর-খট খট-খটর-খট
সন্ধ্যে জমবে কি আবার ভেষজ চা আর সিঙ্গারায়
একরঙা সুদৃশ্য সুলভ সংস্করণ ‘সৃজনী সাহিত্য পত্রিকা’র আড্ডায়!
দেবলোকের যৌনজীবন
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে পুরুরবা ও উর্বশীর মিলনের অনুপ্রাসে দেখি ছবি,
দেখি জাহ্নবীতীরে স্নানরতা মহাকামী শশধর,
দেখি সুরত-পার্বতীর সঙ্গম, দেখি আরো তিলোত্তমার রমন,
দেখি রাধাকৃষ্ণের শৃঙ্গার, শঙ্খচূড়-তুলসীর সুরতক্রীড়া।
পুষ্পাভদ্রার তীরে দেখি মহাকামী শিশ্মের ছবি,
দেখি রম্ভাবতী অশ্বলালায় ইন্দ্রের গোপন রমন ,
বিস্ময়ে চেয়ে দেখি দুর্বাসা-পত্মীর কন্দলীর বিহার
এ যেন এক মহা প্রাচীন শিল্পকলা- শিল্পক্রিয়া
ছুটে চলে অবিরাম মগ্ন শিল্পীর মতো সঙ্গমশিল্পের ধ্যানে।
দেবলোকের অদ্ভুত যৌনজীবন-
হে বোহেমিয়ান পুরুষ,
তোমার নামহীন শুক্রানুরা ভেদ করেছে নারীমন্ডল।
জীবনের মেঘগুলো
”এভাবেই আমরা এভাবেই ছুড়ে ফেলি ভালোবাসা
এভাবেই মুছে ফেলি কত স্বপ্ন সাধ আশা।”
রাত্রি যখন ঘুমিয়ে পড়ে পুরুষ কী ঘুমোয় রাত্রির আড়ালে
ঘুমোয় কী নরোম নিঃশ্বাস টেনে যেভাবে ঘুমোয় ঘুমকাতর প্রেমিকার চোখ
ঘুমোয় কী পুরুষ নিশুথ প্রহরে পাখিডাকা ভোরে ক্লান্তিহীন এই নগরে
উঁকি দেয় জীবনে দহনের শ্বাস জানে কী তা কেউ!
নিঃসঙ্গ পুরুষ দিতে পারে পাড়ি নিঃসঙ্গতার ঢেউ
জমা পড়ে থাকে কতো শতো শব্দ কতো শতো প্রেম
জমা পড়ে থাকে সংসার সঙ্গমের কত মিছে মায়া
যেভাবে জমা পড়ে থাকে জীবনের মেঘগুলো রোদ্দুরের জালে।