ভাসান
যে কোনও নিশীথে যে কোনও শহরে
আগুনের স্মৃতি মাঠে বন্দরে
জ্বলে ওঠে; দেখি আঁধার ঘনালে
প্রাচীন বৃক্ষ নুয়ে পরে ঝড়ে
টলে ওঠে জল, স্নেহের ফসল
তোমাকে ডেকেছে আবছায়া স্বরে
এবং দেখেছি রাতের সীমানা বিগত দিনের
স্তুপাকার শব সাজিয়ে রেখেছে। কাঁচের মিছিলে
চলেছে শুধুই কাঁচের মানুষ। কাছে বা সুদূরে
পুরনো শরীর ছেড়ে আসি আমি পুরনো পুকুরে
পুরনো শরীর আহুতি শেখায় মগ্ন দুপুরে
জলের চিনহ নিয়ে উঠে আসে যোদ্ধার শব
ধূসর আকাশে পেয়েছি তোমাকে পথ ভুল করে
প্রেতের দুচোখে যেটুকু সজল এখনো সরব
সেটুকু আকাশ ক্ষণবিভ্রমে রচিত আগুন
অথবা মৃতের ছায়ায় নিহিত স্বপ্নের ঘুম
সেটুকু নিথর রক্তের দাগ নতুন পোশাকে
যে জলে অঘোর গিয়েছি ভাসান
চোখে যেন সেই জলটুকু থাকে
শর্ত
তোমারই শর্ত গোপনীয়তার
ফুটপাত জুড়ে চকিত আওয়াজ
দূরে হিমঘরে ক্লান্ত রমণ
বারুদের ত্রাস, একরোখা মন
পেরিয়ে এসেছি বাংলা ভাষায়
যেকোনো শর্তে জিততে তোমায়
তারায় তারায় মুগ্ধ ভ্রমণ
শেষ হয়ে এলে ভাঙ্গা বিকেলের
আবছায়া আলো এবং আকাশ
ফিরেছি আমিও চোখের গভীরে
যেকোনো আঁধারে যেকোনো আড়াল
তোমাকে বেঁধেছে হারাবার ভয়ে
করেছে ছিন্ন রক্তের প্রথা
জন্ম দিয়েছে মুক্ত প্রলয়ে
প্রতিটি শর্ত গোপনীয়তার
স্পর্শ
তীক্ষ্ণ ফলায় জন্ম নিতে পারো
হতেও পারো শান্ত বিছানা
সকল কাঁটা ধন্য করে এসো
ঘুমের ছায়ায়, ঘুমের দ্যোতনায়
সকল ক্ষত অনুশোচনার
সফল শুধু শঙ্কা ও বিদ্যুতে
ঝলসে ওঠা অবশ জোছনায়
ক্ষতের ছায়ায় চিনহ বহুরূপীর
রাখছে ধরে চোখের স্ফটিক, জল
সেই তো তোমার আকাশ, শিলালিপি
আমরা তাকে মন্ত্র ভেবেছিলাম
আমরা তাকে ভেবেছিলাম বিধি
তীক্ষ্ণ ফলায় ঝলসে ওঠা কাঁচে
দেয়াললিখন স্পষ্ট হয়ে আসে
আমরা তাকে স্পর্শ করি আলোয়
আঁধারে তার স্পর্শ জেগে থাকে
ঘুমের ছায়ায়, ঘুমের দ্যোতনায়
সকল ক্ষত অনুশোচনার
চোখের স্ফটিক, জলে তোমায় খুঁজি
তুমি ক্ষতের স্পর্শ বোঝো না
শান্তি
সকল বরফ আগুনেই যাবে
ভরাট সবুজে ফিরে তাকাবে
লুণ্ঠিত হীরা আর যূথক্রীড়া
তোমার কলমে শরীর পাবে
বহুদূর হতে তৃষিত নয়নে
তোমার দুয়ারে যারা উপনীত
পাতার পোশাক তাদের পরনে
রাজপথ জুড়ে অস্ত্র শানিত
পেরিয়ে এসেছি; ভাঙ্গা বিকেলের হিম-অবশেষ
জন্ম দিয়েছে অগ্নিগর্ভ জলের স্বদেশ।
আয়নার পারে দেখেছি আকাশ দখল করেছে যুদ্ধবিমান
এপারে আঁধার উজ্জ্বলতারঃ হাওয়ায় নিথর বারুদের ঘ্রাণ
স্পর্শ করেছে আয়না স্থবির তোমার যাদু ও বাস্তবতা
তৃষিত নয়ন শুনেছে কেবলি শান্তির কথা
যে শান্তি নেই স্বপ্নে কারন স্বপ্নে চলেনা তোমার ক্ষমতা
শিঞ্জন গোস্বামী-কবি। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পেশায় অধ্যাপক।