অভিমুখহীন জঙ্গলে
প্রচন্ড ঘামের মুখে চৈত্রের রোদ্দুর –
ভাঙা রাজবাড়ীতে ইটের নিরবতা –
নদীতে জলহীন খাঁ খাঁ করা বুক –
কাটা জঙ্গলে মাটির উদোম স্তন –
চিৎকার করে যন্ত্রণায় আর কান্নার সেসব নিস্তব্ধতা!
তোমার গভীরে এক চরম কারাগার, বিকারগ্রস্ত ধ্বনি, কোদালের শব্দ
ধীরে ধীরে মরবে শীত শেষের বিন্দু অভিলাষের বাগান,
তুমি যে বেঁচে আছো, আসলে তো মৃত
অচিরেই খুঁজবে কাউকে
খামচে ধরে খুব বোঝাতে চাইবে, ধরো আমায় –
আমি তো মরে যাচ্ছি!
যাকে বলো – সেও একটা পাহাড়, ঘোরানো পথ, অভিমুখহীন
ঘুরবে আবার দিশাহীন রাস্তায় – তারও এখানে ওখানে পাথর।
তুমি আর ভাবতে পারবে না পাথরের খাড়িতে বসে
খোলা পথ বলে যে রাস্তা এগিয়ে আসে
সেও জটিলতাপূর্ণ মানসিক সংকটে।
পেছনে যেতে পারবে না, সামনেও না,
আবারও ঘুরবে – চারপাশে পাহাড় নিয়ে।
তুমি একটা পাথর, আরেকটা পাথরে ঠেস দিয়ে
কতটা পূর্ণতা পাওয়া যাবে?
তোমার অস্তিত্ব টের পাও না, সাথে অন্যেরও না
তবু আরেকটা অস্তিত্ব রয়ে যায় কোনখানে
দেখো না তাকে সরাসরি
ঝাঁপ দিতে গেলে আড়াল থেকে না, না করে এক ছায়ামূর্তি।
সে কে? ঐ যে শিস কাটে?
ভরাডুবি চিন্তাদের জন্য আঁকে সুক্ষ্মভূমি,
ঝুঁকে যাওয়া মেরুদন্ড সংস্কারে
শিথিল শরীরের আলস্য ভেঙে
সে ফিসফিস করে
সকল শূন্যতা থেকে অনেক ওপরে।
‘শুরু করো! অপূর্ব হুইসেল!
বাজতে থাকে স্মারকঘন্টা,
নিঃশেষিত কূপ হতে গান উঠতে থাকে
অন্তর্দাহ হতে অন্তর্পূর্ণ সত্তা।
পাহাড়ে বা পাথরে কোথাও আছি
আমার কাজগুলো কি নিয়মমাফিক হলো?
দূরে শান্ত সমুদ্র, উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করে না কখনও
অথচ যখন আমি শান্ত, তখন কী উত্তালই না হয়!
দ্বিত্ব শুভ্রা-কবি। জন্ম ঢাকায়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ রসায়ন হলেও কিশোরী বয়স থেকে সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী ছিলেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের- ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’- ক্ষুদ্র এই লাইনটির মাঝে যে ব্যাপকতা সেটা উপলব্ধি করেন ক্লাস এইটে। কবিতার ধারণক্ষমতা তাকে বিস্মিত করে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ– চৌপাহারার গেহ, রক্তমাদল এবং চিরদূরের কাছে প্রার্থনা। নখরে চিনেছি স্পর্শ নামে আরও একটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
দ্বিত্ব শুভ্রার কবিতায় একটা নতুনত্ব থাকে সব সময়। মুগ্ধ হওয়ার মতো কবিতা।
আমার প্রিয় একজন লেখক। তাঁর ‘ চিরদূরের কাছে প্রার্থনা ‘ বইতে অসাধারণ কিছু কবিতা আছে।