অঅঅঅঅঅঅ…
ফেস্টুনভোরে জেগেছিল বর্ণমালার স্লোগান
ওরা কার্তুজ ভেবে তাক করেছিলো রাইফেল
বললাম অঅঅঅঅঅঅ…
আর অমনিই ছুটে এলো চারপাশ থেকে হাহাকার!
স্বরেআ হ্রস্বই দীর্ঘঈ হ্রস্বউ দীর্ঘঊ, সকলের সম্মিলিত ক্রন্দন!
ছিলাম মিছিলে
সেদিনের সেই রাজপথ
সাদাকালো ভোর আর লাল লাল স্লোগান
ফেস্টুনজুড়ে
ছিলাম তো!
বললাম কঅঅঅঅঅঅঅঅ…
ঠায় দাঁড়িয়ে গ ঘ ঙ
চ এর গাল বেয়ে নেমে গেছে অভিমান!
ডাকলাম ব্যঞ্জনে ব্যঞ্জনে স্বরের সুতোয় গেঁথে
ছুটে এলো ফাল্গুন, রক্তাক্ত দুপুর! আকাশজোড়া হাহাকার!
বললাম মায়ায়ায়ায়ায়ায়া…
পাখিরা বললো— মা মানে মায়া
পলাশ শিমুল ছুঁয়ে ব্যথিত কোকিল গাইলো—মা মানে মাতৃভাষা
বরকত শফি রফিক জব্বার আর ছালামেরা
সেই থমথমে দিনে হুংকার দিয়ে বললো—রাস্ট্র ভাষা বাংলা চাই!
রক্তাক্ত বায়ান্ন বর্ণমালা
(সকল ভাষা শহিদের স্মরণে)
ব এর বুকে লেগেছিলো ঘাতক বুলেট!
প এর পায়ে ঝরেছিলো রক্ত!
ম এর মাথা থেঁতলে গিয়েছিলো রাবার বুলেটে!
ক মাথা উঁচু করে বলেছিলো মানি না এই কারফিউ!
শ্লোগানরত ফ ফুঁসেউঠেছিলো ক্রোধে!
চ তখন চিৎকার করে বলেছিলো : মাতৃভাষা বাংলা চাই!
স্বরবর্ণরা সারিবদ্ধভাবে তখন মিছিলের অগ্রভাগে। পিছু হটছে মোনায়েম খানের সশস্ত্র চ্যালা।
ব্যঞ্জনেরা উদ্দীপ্ত শ্লোগানে শ্লোগানে।
তারা গলা ছেড়ে গাইছে ‘মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাঙলা ভাষা…’
গুলি ছুড়ছে দিগ্বিদিক আইয়ুব খানের পুলিশ!
কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ জিন্নাহর জাতিতত্ত¡!
সন্তান হারানো বিসর্গের চোখে বেদনার্ত অশ্রুজল!
রক্তাক্ত শ্লোগানরত স্বরবর্ণ,
ঘাতক বুলেটে শহিদ—ব্যঞ্জনের সহযোদ্ধাগণ!
তখনো সাহসী চন্দ্রবিন্দু এগিয়ে চলেছে একা!
বায়ান্নর ফাল্গুন দুপুর, রক্তাক্ত রাজপথ।
রক্তে রঞ্জিত বায়ান্ন বর্ণমালা!
পরস্পর আলিঙ্গনে উঠলো ক্রন্দনরোল–
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’
আহমেদ শিপলু-কবি।