পিতার গগজ
চোখের সামনে চাপ চাপ আগুনের ফুলকি উড়ে যায়!
আকাশে মিহি লাল রক্তপর্দা, বাবার চোখে রাজ্যের ঘুম ।
পিতার গগজ অবহেলায় পড়ে আছে সিঁড়ির চৌকাঠে !
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ কী দুঃসহ! ভয়াল রাত-
দেশি নেকড়েরা হায়নার মতো দাঁতাল,
একটি ঘুমন্ত বাড়ির উপর পঙ্গপালের মতো
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল শকুন।
তারপর অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল সারাদেশ,
স্তব্ধ রাতের পর শোকের মাতম,
পিতার গগজ আমাদের শোকের নদীতে প্রবাহিত স্রোত।
সে রাতে পিতার চলে যাওয়া মানে-
সাড়ে সাত কোটি মানুষের শোকানল,
সে রাতে পিতার চলে যাওয়া মানে-
অনন্তকাল বাঙালির জ্বলতে থাকা পিতা বিয়োগের ব্যথা ।
আগুন ছায়া
নদীর ঢেউগুলো ম্রিয়মান, সাগরও শুকিয়ে যায় ক্রমশঃ ভাটার টানে
ডিঙি নৌকা চলে না, মনের নদীতে পলি জমে চর পড়ে গেছে আজ।
চর পড়ে গেছে সাগর মোহনায়; এখন নদীতে জোয়ার আর আসে না
ঊষর হয়ে যাচ্ছে সব সম্পর্কের বাঁধ; আমরা আর কাউকে ভালোবাসি না।
পুড়ে গেছে শস্যের মাঠ দো-ফসলি জমি; কালো গাভি, পোয়াতী ছাগল।
বালিয়ারি ঝড়, পাতার ঘর্ষণে আগুন জ্বলে বন হয়ে গেছে ছারখার।
আগুনের বিপরীতে কালো ছায়ায় একজোড়া চোখ ভাসে
যে চোখ গলে না, পোড়ে না, শুধু অপলক চেয়ে থাকে।
ভুল স্বপ্নের জাল
ভুল স্বপ্নের জালে আটকে গেছে জীবন
ঘোলা জলে আধ-মরা মাছ শিকারের মতোন
প্রতি নিয়ত হাঁটুজলে হাবুডুবু খাই।
মনে তোমাকে দেখার তীব্র সাধ ছিল
হঠাৎ যদি কোনো কালে পেয়ে যাই!
ভুল স্বপ্ন, স্বপ্নের ভুল; আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে
আকাশের চাঁদ, সাগর, পাহাড় বেরসিক পড়ে থাকে।
উদ্ভট চিন্তাগুলো মরে যাক; পুড়ে খাঁকি হোক ভালোবাসা
জীবনের গ্লানি ম্লান হোক, আমি আঁধারে খুঁজে নেব শরীরী ভাষা।