গেওরগ ট্রাক্ল-কবি। জন্ম ৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭ সালে অস্ট্রিয়ার সলজবার্গ শহরে। মৃত্যু-১৯১৫ সালের ৩ নভেম্বর। তার কবিতার শব্দতরঙ্গে বহমান আছে প্রগাঢ় নীরবতা। যেখানে পাওয়া যায়, আবহমান ঋতু প্রকৃতির নিশ্চুপ সুন্দরের উচ্চারণ। আর কবিতার পটভূমি জুড়ে ব্যাপ্ত থাকে রহস্যময় স্মৃতি নৈসর্গের নান্দনিক ভাব। যা পাঠককে বিমোহিত করে নির্দ্বিধায়। কবি অনন্ত উজ্জ্বল কর্তৃক ভাষান্তরিত গেওরগ ট্রাকলের কবিতার বই থেকে চাতাল এর পাঠকদের জন্য তিনটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
রাত
আজ রাতে নিঃস্ব হয়েছে আমার চোখের নীলাভতা,
আমার হৃদয়ের লাল রক্ত
ওহ্! কীভাবে তোমার স্মৃতি এখনো পোড়ায়!
তোমার দুঃখবোধের ছদ্মবেশ,
দূরত্বের বৃত্ত আরো বাড়িয়ে দেয়।
তোমার লালরঙা ঠোঁট আমাকে হতাশ করে!
নীরবতার প্রতি
ওহ্! সন্ধ্যায় বিশাল শহরের পাগলামি
উল্টানো গাছের গর্তগুলো হাঁ করে আছে দেয়ালের পেছনে,
রুপালি মুখোশ থেকে অসৎ সঙ্গীর আত্মা;
তাড়িয়ে নিয়ে যায় নির্দয় রাতকে
সঙ্গে আলোর আকর্ষণীয় ঢেউ।
ওহ! সন্ধ্যা ঘণ্টার মগ্ন সম্মিলিত শব্দ।
বরফ ঢাকা কম্পমান চালার নিচে পতিতার একটি জীবন্ত শিশু।
মালিকের ক্ষিপ্ত চাবুকের শব্দে পাগল প্রায়।
রক্তবর্ণ অসুখ, ক্ষুধায় বিদীর্ণ হয়েছে সবুজ চোখ,
ওহ্! ঈশ্বরের ভয়ঙ্কর হাসি।
কিন্তু শান্ত মানবতার রক্ত অন্ধকার গুহার মধ্যে নীরব,
উদ্ধার হওয়া মাথা শক্ত লোহার ছাঁচের বাইরে।
বয়স
একটি প্রাণীর মুখ বাদামি―সবুজে
সলজ্জ আলোর বিকিরণ আমার দিকে, ঝোপ-ঝাড় ধূমায়িত।
অনেক দূরে একটা পুরনো ঝরনা গান গায়-
শিশুর কণ্ঠে, আমি সেই গান শুনি।
বন্য কাকেরা উপহাস করে
আর আমার চতুর্দিকের ভূর্জবৃক্ষরা আড়াল করে নিজেদের।
আমি নীরব দাঁড়িয়ে প্রায় নিভে যাওয়া আগুনের সামনে
এবং নিজে নিজেই একটি মনোরম ছবি আঁকা হয়ে যাচ্ছি,
সোনালি মাটিতে ভালোবাসার প্রাচীন রূপকথার মতো।
মেঘেরা নীরবতা ছড়িয়ে দেয় সমস্ত পাহাড়ে
আবছায়া পুকুরের আয়না থেকে
ফুল আর ফলেদের হাতছানি, জ্বলজ্বলে এবং জ্যোতির্ময়।