সারাংশ’৭১
আমি সত্যিই কাউকে ডাকিনি।
আমার প্রশ্বাস,আমার উৎসব আমায় মারণাস্ত্র ধরতে শিখিয়েছে।
কতোবার অসহায় পিতার মুখে ক্লান্তির মানচিত্রে একেঁছি মুক্ত স্বদেশ
অসহায় মায়ের চোখের জল মুছতে মুছতে শত্রুকে হত্যার সংকল্প করেছি কতোভাবে
কতোবার বৈশাখী উৎসবে মিশে যেতে বীরাঙ্গনা বোনটির কান্না জড়ানো মুখ মনে পড়েছে ।
বিজয়ের ঘ্রাণমাখা লাল-সবুজ পতাকার সাহসের নিচে দাঁড়ালেই
পুরো বাংলাদেশটিকেই এই বোবা বিধ্বস্ত পাঁজরে ঘুমিয়ে পড়তে দেখি চুপচাপ।
সন্তানের যুদ্ধযাত্রার স্মৃতি বুকে বেঁচে থাকা
কোন মায়ের সামনে দাঁড়ালেই নিজেকে স্নেহাতুর মনে হয়
ধূসর গল্প হয়ে জেগে থাকা পিতার সামনে দাঁড়ালেই নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
একাত্তরটি রক্তগোলাপের শোক মগজের ভ‚মিতে রুয়ে থাকে নিশ্চুপ।
কুয়াশারঙা ভোরে সর্ষে মাঠের বিস্মৃত হলুদ
অপরাহ্নের রক্তাভ মেঘে বাড়িফেরা গাঢ় মায়াবী চিলের গান
মিশে আছে চৈতন্যের দৃপ্ত আয়োজনে।
এই বাংলা,নির্বিবাদ প্রাণবায়ু আমার…
আমার অর্ন্তলোকের শিরোনাম লালন ফকির
আমার যাবৎ নির্ভয়ের নাম মাওলানা ভাসানী
আমার সাহসের সারাংশ উচ্চারণ শেখ মুজিবুর রহমান ।
স্বা-ধী-ন-তা
সেই উচ্চারণটি আজো করতে পারিনি ।
জিহ্বাবায় কেঁপে ওঠা ষোলটি রক্তাক্ত আঙুর লেপ্টে থাকে পৌষের আমন্ত্রণে
তার মুদ্রিত স্বাদ ঠোঁটে নিয়ে জেগে থাকে অপরূপ দুপুর ;
হাওয়াকালের ডানাগুচ্ছ দারুণ গর্বেও নিরঙ্কুশ সাদাটে সুন্দর।
তোমাদের আকাশে ঝুলে গেছে মরুভ‚মির জলপাইরঙা কেঁউটের ছায়ামুখ।
হৃদয়ে তুলে নিয়ে রঙিন সম্মোহনের শেষ মন্ত্র
কোনদিন বলতে পারিনি, ভালো নেই কুয়াশাচ্ছন্ন গ্রাম,অতিবৃদ্ধা প্রপিতামহীর ন্যূজ¦ শরীর ।
কোনদিন জানতে চাওনি কেমন আছি ।
শুধু বিজয়ের ভোরে স্বাধীনতার চাদর উড়িয়ে,রাগ-ভৈরবীতে গেয়ে ওঠো…অনিবনশ্বর মুক্তিবার্তা ।
বাংলাদেশ-পবিত্র আয়নায়
প্রণম্য ভালোবাসা জেনো ঘাসফুল শিরোনামে
নদীতীর যেমন ভাঙে জলের বসুধা কোমল আহবানে
যুদ্ধ-জলছাপ বুকে যেরকম অবাক বেঁচে থাকা মানুষে- মানুষে
আদি,অরুণরঙা ইতিহাস ভুলে জন্ম নেয়া পথ-অপথের দীঘল নিনাদ।
আড়াল অক্ষরে পোড়ে পৌরাণিক বাংলাভ‚মি
দুখিনী মায়ের মতোন আঁচলাবৃত জলে-স্নেহে-দীর্ঘশ্বাসে
মুর্ছনা মুছে যায় বীরাঙ্গনার;সাগ্নিক যোগীর যেরকম ভাঙে ঘোর
প্রভুবেশে নামে মুক্তিসেনা অসূর নিধনে
কটাক্ষ করে মুদ্রিত মোহের মায়াপথ,সুরম্য জীবনের ভবিষ্যত।
স্মৃতির কোন ইতিকথা থাকে না কোনদিন
ভেসে থাকে জয়গান,পরম আধুলি যেমন আশ্চর্য রোদ্দুর দেখায়
মুগ্ধ সময়ের বেশে সবশেষে নামে জ্যোৎস্না-পার্বন
জাদুঘরে থাকে শুয়ে সোনারঙা দিন।
এমরান হাসান-কবি। জন্ম টাঙ্গাইল। পেশায় কলেজ শিক্ষক।
প্রকাশিত বই– হাওয়াঘরের মৃত্যুমুদ্রা