১. ভদ্রলোক
কবির শহরে ভদ্রলোকেরা সকাল সকাল থলে হাতে ফাটকবাজারে ঢুকে পড়েন।
গিন্নি-মায়েরা সাদা কাগজে ফর্দ লিখে পাঠান।
বাড়ি এসে দুধ-চা নিয়ে দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বসেন। খুঁটে খুঁটে দেখেন কোথায় কী হল। মাঝেমধ্যে হাতে মোমবাতি নিয়ে মিছিলে বের হন।কফি খেতে খেতে স্লোগান দেন,’ মানছি না, মানবো না।’ ‘বাংলাভাষা জিন্দাবাদ’ ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ’। বলে বাড়িতে এসে ছাগলের দুধের চা পান করেন।
কবির শহরের ভদ্রলোকরা আপিসে সাপলুডো খেলে সামাজিক মাধ্যমে বিপ্লবের জোয়ার আনেন।
মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ বলেন অথচ নিজে পান করেন ছাগদুগ্ধ। সন্তানকে কনভেন্ট-এ পাঠিয়ে মঞ্চে ওঠে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
কবির শহরের ভদ্রলোকেরা ভাষার ছুঁৎমার্গ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আমোদ-আহ্লাদ করেন।
২. সংবাদকর্মী
কবির শহরে সংবাদকর্মীরা পাতার পর পাতা খবর লেখেন।
সারাদিন মাঠেঘাটে বুনো ঘোড়ার মতো দৌড় দেন। রাতে ফিরে সংবাদপত্রের আপিসে ঘাড় গুঁজে লিখতে থাকেন একের পর এক অক্ষর।
রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরে খবর নিয়ে আবারও বসে পড়েন নিজেদের আয়নায়
কবির শহরে সংবাদকর্মীর প্রেমিকারা অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত হয়ে একা একা নীরবে কবরে চলে যান
৩. সম্পাদক
কবির শহরে পত্রিকার সম্পাদকদের অবস্থা শাঁখের করাত।
‘আমার লেখা কেন ছাপলেন না?’
অথচ সম্পাদক নিজে জানেন এ লেখা অখাদ্য। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা দৈনিক পত্রিকার পেটের ক্ষিধে রাক্ষসীর মতো।সে যা পায় তাই খায়। পচা-গলা উৎকৃষ্ট সব গিলতে থাকে গোগ্রাসে। সম্পাদক সেই খিদের সামনে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করেন। রাক্ষসী কড়া চোখে তাকায় তার দিকে। খাবার না পেলে যে কোনো মুহূর্তে সে সম্পাদককেই গিলে নেবে
সম্পাদক কবির শহরের টাটকা-বাসি-পচা-গলা মলমূত্র, ফল, মাছ, মাংস, গরম ভাত, তরকারি, এঁটো-কাটা একত্রে দৈনিক পত্রিকার পেটে ঢোকাতে থাকেন